জাতীয় বাজেট যেমন একটি রাষ্ট্রের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব, তেমনি এর মধ্য দিয়ে তার উন্নয়ন নীতি দর্শনের প্রয়োগিক প্রতিফলনও ঘটে থাকে। সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ২৪ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছে। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে এ হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা এবং দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার রয়েছে এই সরকারের। এখন সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শেষ প্রায়। একই সময়ে বৈশ্বিক পর্যায়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) নির্ধারিত হতে যাচ্ছে। এরকম একটি সন্ধিক্ষণে এবারের বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমরা লক্ষ্য করছি এই সরকারের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন মৎস ও প্রাণি সম্পদ, খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়গুলো কিছুটা গুরত্ব পেয়েছে। কিন্তু সেখানে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে। এ পরিস্থিতি মাথায় নিয়ে আমরা কৃষি খাতে সরকার প্রদত্ত বাজেট বিবেচনা ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার প্রসঙ্গে আলোচনা করছি।
গতকয়েক দশকে আমাদের অর্থনীতির কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটেছে। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান কমছে। শিল্প ও সেবা খাতের অবদান বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ মানুষের জীবন-জীবিকা কোনো না কোনোভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল। অথচ প্রতিবছর বাজেটের আকার বৃদ্ধি করলেও কৃষিতে ভর্তুকি ৯ হাজার কোটি টাকা স্থির আছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে বরাদ্দ কমতে থাকলেও ১৩-১৪ অর্থবছরে কৃষিখাতে বরাদ্দ একটু বেড়ে মোট হেক্টর ৪.৫১ শতাংশ হয়। কিন্তু ২০১৪-১৫ অর্থ বছর আবার তা কমতে থাকে এবং এ বছর বাজেটের ৩ শতাংশ। যা শুধু বর্তমান মহাজোট সরকারের দুই আমলেরই নয়, গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ বরাদ্দ ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের তুলনায় ২৮.০৪ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের তুলনায় ১৩.০৬ শতাংশ কম। সার, বীজ, কীটনাশক, সেচ ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের একর প্রতি খরচ বাড়লেও সেই হারে কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এরপরও যদি কৃষিতে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের পরিমাণ কমতে থাকে। তাহলে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা ক্রমেই বিনিয়োগের ক্ষমতা হারাবেন, যা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তার উপর হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে দেশে ক্রমেই কৃষি জমি সঙ্কুচিত হচ্ছে। রাস্তার দুই ধার দিয়ে কৃষি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে বড় বড় ভবন, ইটভাটা, শিল্প-কলকারখানা। ২০১২ সালে কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন ২০১২ এর খসড়া প্রণীত হয়। এবারের বাজেট তা চূড়ান্ত করার কথা বলা হলেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা নেই। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার দুই ধারে গড়ে উঠা শিল্প কলকারখানার ব্যাপারে এ আইনে কোনো নির্দেশনা নেই। এসব শিল্পের সঙ্গে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের কৃষি বা সংস্কৃতির কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ আমরা দেখতে পাচ্ছি, হিমাগারের অভাবে প্রতিবছর মৌসুমে প্রচুর পরিমাণে আলু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষক বস্তা বস্তা আলুর দাম না পেয়ে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছেন। সরকারের খুব সামান্য বিনিয়োগে আলু থেকে চিপস এবং টমেটো থেকে সস সহ এর বহুমূখী ব্যবহার নিশ্চিত হতে পারে। গড়ে উঠেতে পারে কৃষি ভিত্তিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প কল-কারখানা। অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে কৃষি ভিত্তিক শিল্প কল-কারখানা প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। কিন্তু বাজেটে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা নেই। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে কৃষি উপকরণ সহায়তা প্রদানের বিষয়টি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিলো। কিন্তু এ বিষয়ে বর্তমানে বাজেট কোনো নির্দেশনা নেই। কৃষি ভর্তূকি প্রদান খাতে ১২-১৩ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিলো ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেখানে এবারে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯ হাজার কোটি টাকা মাত্র। পরিমাণগতভাবে বাজেট কমেছে, অথচ এ সময়ে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে ৭.৯ শতাংশ এবং সমপ্রতিক সময়ে কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে এ খাতের প্রতি সুবিবেচনা করা হয়নি। বিগত বাজেটেও ডিজেলের উপর ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সার ও সেচের উপর ভর্তূকি প্রদান করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, এর সুফল কি কৃষক বা ক্ষেতমজুররা পেয়েছেন? এগুলো সরবরাহ করার ক্ষেত্রে কি কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে? আমরা যতটুকু জেনেছি, তাতে কৃষিকার্ডের মাধ্যমে এ ভর্তুকি প্রদান করা হয়নি এবং কৃষক এ থেকে সরাসরি কোনো উপকার পাননি। এর সুফল ভোগ করেছে সেচযন্ত্রের মালিক, যারা টাকার বিনিময়ে সেচের পানি বিক্রি করে। লাভবান হয়েছে সারের ডিলার। সরকার যদি সত্যিকার অর্থে কৃষকের স্বার্থকে বড় করে দেখতে চায় তাহলে সেচ, সার, বীজসহ সব ক্ষেত্রে প্রদেয় ভর্তুকির টাকা কৃষকের কাছে পৌছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা যদি আমাদের দেশটিকে সত্যিকার অর্থে জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাই তাহলে এ ক্ষেত্রেও ধারাবাহিকতা থাকাটা আবশ্যক।
ফজর | ৪:৫৮ |
যোহর | ১১:৪৫ |
আসর | ৩:৩৬ |
মাগরিব | ৫:১৫ |
এশা | ৬:৩১ |
হেরার আলো
|
বাণী চিরন্তন
|
আল-হাদিস
|
২০-সূরা : তা-হা বড়দের সম্মান কর, ছোটরা তোমাকে সম্মান করবে। নারী-পুরুষের যমজ অর্ধাঙ্গিণী। |
করোনা পরিস্থিতি | ||
বাংলাদেশ | বিশ্ব | |
আক্রান্ত | ৭,৫১,৬৫৯ | ১৬,৮০,১৩,৪১৫ |
সুস্থ | ৭,৩২,৮১০ | ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮ |
মৃত্যু | ১২,৪৪১ | ৩৪,৮৮,২৩৭ |
দেশ | ২০০ ২১৩ | |
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। |
হ্যাঁ | না | মতামত নেই |