চাঁদপুর, সোমবার, ১৪ জুন ২০২১, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮, ২ জিলকদ ১৪৪২
jibon dip

সর্বশেষ খবর :

  • -
বিষণ্নতার কারণ ও করণীয়
ডাঃ ফারহানা মোবিন
১৪ জুন, ২০২১ ০০:০০:০০
প্রিন্টঅ-অ+


মানুষের চাহিদার শেষ নেই। আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে যখন প্রাপ্তির মেলবন্ধন থাকে না, তখনই মানুষের মন খারাপ হয়। যারা বাস্তববাদী মানুষ তারা সবকিছু খুব দ্রুত মেনে নিতে পারেন। কিন্তু যারা নৈরাশ্যবাদী, অধিকাংশ সময়ে নেতিবাচক চিন্তা যে মানুষগুলোর মস্তিষ্কে বাসা বেঁধে থাকে, সেই মানুষগুলো সহজে দুঃখ-কষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে না। খুব দ্রুত হতাশার সাগরে ডুবে যায়। জীবনে বিপর্যয় আসবেই। আমাদেরকে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। কিন্তু যারা মেনে নিতে পারেন না, ভেঙ্গে যাওয়া মনকে শক্ত করতে পারেন না, তারাই ভুগতে থাকেন বিষণ্নতায়।



বিষণ্নতা কখন যে মানুষকে গ্রাস করে মানুষ নিজেও বুঝতে পারে না। দিনের পর দিন মন খারাপ, দুঃখ-কষ্ট, নেতিবাচক চিন্তা থেকে তৈরি হয় বিষণ্নতা। বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশন দীর্ঘ সময় যাবৎ থাকলে, সেটা হয়ে ওঠে মানসিক রোগ।



 



বিষণ্নতার লক্ষণ



 



মন খারাপ থাকা-সব মানুষেরই রয়েছে না পাওয়া। কারো হয়তো কম। কারো বেশি। মানুষকে বাহির থেকে দেখে উপলব্ধি করা যায় না, কিন্তু কোনো মানুষই পরিপূর্ণ সুখী নয়। মানুষকে চারপাশের পরিবেশ মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়। বিষণ্নতার রোগীরা প্রায় সবসময়ই খুব বেশি মন খারাপ করে থাকে। মন খারাপ করার জন্য তারা জরুরি কাজেও দিতে পারেন না মনোযোগ। অতিরিক্ত মন খারাপ থেকে বেড়ে যায় আত্মহত্যা করার প্রবণতা।



নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া-বিষণ্ন রোগী জনকোলাহল, মানুষজন থেকে একাকী নিভৃতে থাকতে পছন্দ করেন। তাদের মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা কাজ করে। মানুষজন, আনন্দ আয়োজন তাদের ভালো লাগে না। মানুষজনের মাঝে থাকলেও একাকীত্ববোধ প্রতি মুহূর্তে তাদেরকে গ্রাস করে।



হীনমন্যতাবোধ-নিজে অধিকাংশ সময় অন্যের তুলনায় পেছনে পড়ে আছে, জীবন থেকে অনেক পিছিয়ে গেছে, এই ধরনের অনুভূতি তাদের মস্তিষ্কে বাসা বেঁধে ফেলে। বছরের পর বছর এই ধরনের হীনমন্যতাবোধ চলতেই থাকে। এই ধরনের সমস্যা থেকে আনন্দের মাঝেও তাদের কান্না পায়। একটু কষ্টে কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেও দেখা যায়।



ওজনের পরিবর্তন-হঠাৎ ওজন বেড়ে বা কমে যাওয়া, ক্ষুধার হঠাৎ করে তারতম্য তৈরি হওয়া, নিদ্রাহীনতা বা ঘুমের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, এই ধরনের সমস্যা অনেকের মাঝে দেখা যায়। খুব বেশি মন খারাপের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ত্বক, চুলসহ পুরো দেহের উপর। অনেক সময় দেখা যায় খাবার হজমে সমস্যা হচ্ছে। মাথা ব্যথা লেগেই থাকছে।



শ্বাসকষ্ট-বিষণ্নতা মস্তিষ্কে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয়। দিনের পর দিন এই অবস্থা চলতে থাকলে, অনেক সময় ভয়ানক শ্বাসকষ্টও হতে পারে। কোনো বেদনাবিধুর ঘটনার আঘাতজনিত স্মৃতি, প্রিয় কাউকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট বা কোনো কষ্টের ঘটনা, যা কাউকে বলা যায় না, বহনও করা যায় না, এই ধরনের ঘটনা বারবার ঘটতে থাকলে বিষণ্নতার রোগীদের অনেক সময় বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা বা শ্বাসকষ্ট হয়। হয়তো ইসিজি বা হৃৎপিন্ডের পরীক্ষা করালে তেমন কিছুই ধরা পড়ে না কিন্তু মস্তিষ্কে ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা প্রতিয়নিত কমে যাওয়ার জন্য শরীর খারাপ লাগে, নিঃশ্বাস নিতে অনেকের কষ্ট হয়।



জ্বর জ্বর অনুভূতি-সারা দেহে ব্যথা, মাথা-ঘাড়ে ব্যথা, দেহের প্রতিটি জয়েন্টে ব্যথা, জ্বর জ্বর অনুভূতি, মাথা ঘোরানো, মেজাজ খারাপ লাগা, একটুতেই রেগে যাওয়া, অতিরিক্ত শুচি বায়ুগ্রস্থতা, এই ধরনের সমস্যাগুলো থাকতে পারে।



উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস-অধিকাংশ বিষণ্নতার রোগী অকালেই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়। বছরের পর বছর দুঃখ কষ্ট লুকিয়ে রাখতে রাখতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরিণামে কমে যায় যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।



ত্বকের সমস্যা-দুশ্চিন্তা, মানসিক অবসাদের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আমাদের ত্বক, চুলের উপর। বিষণ্নতার রোগীদের চুল ঝরে যাওয়ার, ত্বকে মেসতা, চোখের নিচে কালি জমে যায়। অনেকের হরমোন লেভেলের তারতম্য ঘটে।



মাইগ্রেনের সমস্যা-মাথা ব্যথা, মানসিক চাপ থেকে মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যায়। অনেকেই মাথা ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে চা, কফি, সিগারেট খায়। অতিরিক্ত চা, কফি, সিগারেট স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।



মানসিক রোগ-বিষণ্নতা বছরের পর বছর থাকলে বিভিন্ন ধরনের মানসিক রোগ হতে পারে। অধিকাংশ মানসিক রোগ তৈরি হয় বিষণ্নতা, হতাশা থেকে।



 



বিষণ্নতার কারণ ও করণীয়



 



* দীর্ঘমেয়াদি কোনো দুঃখ, কষ্ট, হতাশা থেকে তৈরি হয় বিষণ্নতা। যা অধিকাংশ সময়ে ধরা পরে না। হয়তো বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হলে তখন বিষণ্নতার রোগীদের রোগ নির্ণয় হয়। বিষণ্নতার উল্লেখিত লক্ষণগুলো কারো মধ্যে থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ ভীষণ জরুরি।



* সবসময় ইতিবাচক চিন্তা, ধর্ম-কর্ম, সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত থাকলে হতাশা মানুষকে সহজে গ্রাস করতে পারে না।



* ব্যর্থতা জীবনে থাকবেই। এর মাঝেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। নৈরাশ্যবাদী বন্ধু-বান্ধবীদের বা প্রতিবেশীর কথাতে নিজেকে অযোগ্য ভেবে কষ্ট পাওয়ার পরিবর্তে আমরা কীভাবে সামনে এগিয়ে যাব, কীভাবে নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ করব, আমাদেরকে সেই চেষ্টা করতে হবে।



* নিজেকে বাস্তববাদী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নিয়মিত খবরের কাগজ পড়া, সময় উপযোগী টক শো দেখা, ইতিবাচক নাটক সিনেমা, ইউটিউবে আত্ম উন্নয়নমূলক ভিডিও আপনাকে দেবে মানসিক প্রশান্তি। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য বাস্তববাদী চিন্তা-চেতনা, চারপাশের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর সম্পর্কে ধারণা রাখাটা অপরিহার্য।



* সময়-সুযোগ পেলেই চোখ বন্ধ করে, কয়েক মিনিট বুক ভরে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করবেন। মস্তিষ্কে যত বেশি অক্সিজেন পেঁৗছে, আমাদের পুরো দেহের রক্তে ধীরে ধীরে সেই অক্সিজেন পৌছে। এতে কমবে মাথার মধ্যে জ্যাম হওয়ার অনুভূতি অর্থাৎ স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা। যা বিষণ্নতা তৈরির জন্য একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।



* সময় ও সুযোগ পেলেই বেড়াতে যেতে হবে। মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বহু মানুষের সাথে যোগাযোগ থাকলে, মানুষের মন উপলব্ধি করতে পারে যে, সে একাই দুঃখী নয়। এই পৃথিবীতে একেক মানুষের রয়েছে একেক ধরনের সমস্যা। এই সমস্যা থেকে আমাদের নিজেদেরকে দূরে থাকতে হবে। আমাদের মনোবল হারালে চলবে না।



* আপনি নিজ থেকে কিছুতেই যদি আপনার মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তাহলে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।



* অনিয়ন্ত্রিত আবেগ, রাগ, আতঙ্ক থেকেও মানসিক রোগ, বিষণ্নতা তৈরি হয়। দিনের পর দিন এই ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ নিজের বা পরিবারের কারো মধ্যে থাকলে সাইকোথেরাপিস্ট এর পরামর্শ জরুরি।



* সময় পেলেই হাঁটতে হবে। হাঁটাহাঁটি করলে মানুষের সারা দেহে সুষ্ঠুভাবে রক্ত চলাচল করে। এতে মানুষের মন ভালো থাকে।



* কুটিল, জটিল, অশান্তি বাধাতে পছন্দ করে, এই ধরনের মানুষ থেকে দূরে থাকাটাই শ্রেয়।



 



লেখক : মেডিকেল অফিসার (গাইনি অ্যান্ড অবস্), স্কয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।



 



* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর



ই-মেইল : [email protected]



 



 



 


হেরার আলো
বাণী চিরন্তন
আল-হাদিস

২-সূরা বাকারা


২৮৬ আয়াত, ৪০ রুকু, মাদানী


পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।


 


৭৩। আমি বলিলাম, 'ইহার কোন অংশ দ্বারা উহাকে আঘাত কর।' এইভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তাঁহার নিদর্শন তোমাদিগকে দেখাইয়া থাকেন, যাহাতে তোমরা অনুধাবন করিতে পার।


 


 


সাগরের প্রশংসা করো কিন্তু স্থলে অবস্থান করো। _হার্বাট।


নফসকে দমন করাই সর্বপ্রথম জিহাদ।


 


ফটো গ্যালারি
করোনা পরিস্থিতি
বাংলাদেশ বিশ্ব
আক্রান্ত ৭,৫১,৬৫৯ ১৬,৮০,১৩,৪১৫
সুস্থ ৭,৩২,৮১০ ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮
মৃত্যু ১২,৪৪১ ৩৪,৮৮,২৩৭
দেশ ২০০ ২১৩
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আজকের পাঠকসংখ্যা
২৯১২৯৬৭৪
পুরোন সংখ্যা