মানুষের মূক মুখে ভাষার যেদিন হাতেখড়ি ছড়ার বোধকরি সেদিনই জন্ম। ছড়া শৈশব হতে কবর পর্যন্ত মানুষের জীবনে জড়িয়ে আছে এবং থাকবে। সভ্যতার নির্মাণ হতে শুরু করে বিকাশ ও বৃদ্ধিতে ছড়ার ভূমিকা অপরিহার্য। খুব গভীর বিষয়কে যেমন ছড়া ধারণ করতে পারে অবলীলায় তেমনি খুব হাল্কা বিষয়কেও ছড়া চমৎকারভাবে পরিবেশনযোগ্য করে তোলে। দৈনন্দিন জীবনের যাপন ও উদ্যাপন নিয়ে ছড়া খুব সহজেই নিজেকে বাণীবদ্ধ করে তুলতে পারে। ছড়া বলে কম কিন্তু ভাবায় বেশি। ছড়া জাগায়। সে ঘুম পাড়াতেও জাগায় আবার ঘুম ভাঙাতেও জাগায়। ঘুম পাড়ানির ছড়া ঘুম আনতে গিয়ে ইতিহাসকে জাগায়। আবার ঘুম ভাঙাতে গিয়ে ছড়া ইতিহাসকে কাঁপায়।
ছড়া এক শক্তিমান সংস্কারক। সংস্কার মানেই পরিবর্তন। সংস্কার মানেই পুরানোকে নতুন করে নির্মাণ। দেশ-কাল ও সমাজের নিরিখে শ্লোগানে-বচনে-ভাষণে-শাসনে ছড়া সংস্কারের এক অতুলনীয় ধারা।
'ছড়া' আসলে কী তা এক বাক্যে প্রকাশ করা কঠিন। ছড়াকে সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে গেলে কেবল সাহিত্যের মানদন্ড বা শিল্পের মানদন্ড দিয়ে বিচার করা অনুচিত। ছড়া যদিও বহুলাংশে খোকা-খুকুদের বিষয়, বড়দের ছড়ার আবেদনও নেহায়েৎ কম নয়। বড়দের ছড়ার এক বড় অংশ জুড়ে আছে রাজনীতি। অনেক কালজয়ী রাজনৈতিক ছড়া যেমন আছে, তেমনি সমকালীন রাজনৈতিক ছড়াও মানুষের মুখে মুখে কিংবদন্তি হয়ে আছে। ছড়া কখনো শিশুর খেলনার মতো, ছড়া কখনো খুকুর সঙ্গীর মতো। ছড়া কখনো অন্দর মহলে নারীদের ঠাট্টা ও ধাঁধার উপকরণ। আবার ছড়া কখনো উন্মুক্ত তরবারি বা বোমার চেয়েও ভয়ঙ্কর। ছড়া যেমন শিশুর মানস নির্মাণ করে, তেমনি ছড়া আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। বক্তৃতা বা ভাষণে কোনো আন্দোলন যতটুকু আগায়, তার চেয়ে ছড়া অনেক বেশি বল্লমের ফলার মতো আচরণ করে এ ফোঁড় ও ফোঁড় করে দেয় আন্দোলনের লক্ষ্যবস্তুকে। ছড়া তাই সর্বোৎকৃষ্ট সমাজ বদলের হাতিয়ার। ছড়া সর্বগামী, ছড়া অনন্ত শক্তির অধিকারী। ছড়ার বহুবিধ ব্যবহার সমাজ বদলের আন্দোলনকে সহজতর করে তুলেছে। ছড়ার মাঝে সহজেই ঢোকানো যায় ইতিহাস, ছড়ার মধ্যে ঝংকৃত হয় বিজ্ঞান। ছড়া যেমন সুঁচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হতে পারে, তেমনি করে আর কোনো সাহিত্য মাধ্যম অনুপ্রবেশের শক্তি রাখে না। ছড়া কখনো ব্যাজোস্তুতি ধারণ করে, আবার কখনো শ্লোগান হয়ে গণমানুষের কণ্ঠস্বরে পরিণত হয়ে যায়।
প্রকৃত ছড়া লেখা কঠিন। শব্দে শব্দে বিয়ে দিলেই যেমন কবিতা হয়ে ওঠে না, তেমনি কেবল অন্ত্যমিল দিতে পারলেই ছড়া হয়ে ওঠে না। ছড়ায় অন্ত্যমিল যেমন আবশ্যিক, তেমনি ছড়ায় স্বাভাবিক গতিও জরুরি। একাধিক মাত্রায় অন্ত্যমিল দিতে গিয়ে ছড়া কখনো হয়ে যায় আরোপিত, আবার কখনো অতি কারিগরিতে ছড়া আর ছড়া থাকে না, অনেকটা মেকওভারের পরে বিয়ের কনে যেমন হয়ে যায়, তেমনি অচেনা হয়ে ওঠে। ছড়াকে মসলিন কাপড় ও বাদামের খোসার উপমা দিয়ে তুলনা করা যেতে পারে। বাদামের খোসা বা ম্যাচের বাক্সে একটা আস্ত মসলিনকে যেমন ঢুকিয়ে ফেলা যায় অবলীলায়, তেমনি ছড়ার কাঠামোতেও একটা আস্ত ইতিহাস কিংবা আন্দোলনকে সহজেই ঢুকিয়ে ফেলা যায়।
সমাজ বদলের উৎকৃষ্ট হাতিয়ার হিসেবে ছড়াকে দেখতে গেলে আমাদের শুরু করতে হয় সেই চর্যাপদ থেকে। চর্যাপদে ভুসুকু পা'র যে চর্যাতে বাঙালি হয়ে ওঠার ঘোষণা আছে, আমরা তাতে পাই,
'বাজ ণাব পাড়ী পউআ খালে বাহিউ
অদঅ বঙ্গাল দেশ লুড়িউ
আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলি
ণিঅ ঘরিণী চন্ডালে লেলী'।
(ভুসুকু পা'_চর্যাপদ, ঊনপঞ্চাশ নং চর্যা)
মোটামুটি অনুবাদে আমরা বুঝি, বজ্র নৌকায় চড়ে পদ্মা পাড়ি দিয়ে অদ্বিতীয় বঙ্গাল দেশ লুটে নিচ্ছে লুটেরা। কারো তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। কিন্তু যখন নিজের ঘরণীকে দস্যু চন্ডাল টেনে নিয়ে যেতে আসল তখন ভুসুকু সাহসে বীর বাঙালি হয়ে উঠলো। অর্থাৎ, বাঙালি ততক্ষণ প্রতিক্রিয়া দেখায় না বা প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত বিপদ নিজের ঘাড়ে আসে। এই ছড়াটিতে ব্যাজোস্তুতির মাধ্যমে তৎকালীন সমাজকে জাগানোর যে চেষ্টা করা হলো তাতে এটুকু বলা যায়, এর চেয়ে ধারাল আর কোনো হাতিয়ার আছে কি না সন্দেহ, যার দ্বারা ঘুমন্ত এই জাতির জেগে ঘুমানোর অভ্যাসে পরিবর্তন আনা যেত। বাঙালি যেমন বীরের জাতি তেমনি তাকে কুম্ভকর্ণ বলাটাও অসমীচীন হবে না। সে জেগে ঘুমিয়ে থাকে যেনো নিজের চোখ বন্ধ করলেই সকল প্রলয় বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ 'ঊনা ভাতে দুনা বল/ বেশি ভাতে রসাতল'- এই প্রাজ্ঞ বচন দিয়ে বাঙালিকে দুপুরের ভাতঘুম হতে দূরে রেখে আলসেমি পরিহারের কত না প্রয়াস নেয়া হয়েছে। সেই হতে বাঙালি পরিশ্রমী হয়ে ধারণ করেছে প্রবচনতুল্য লোকছড়া,
'পরিশ্রমে ধন আনে
পুণ্যে আনে সুখ,
আলস্যে দারিদ্র্য আনে
পাপে আনে দুখ।'
(অগি্নমিত্র)
ছোট বেলা হতেই, শিশু যখন মায়ের কোলে, তখন থেকেই তাকে শেখানো হয় বর্গীদের অত্যাচারের কথা। শিশু সেই কথা শুনতে শুনতে বড় হয়ে একদিন নিজে ঠিকই প্রতিবাদী হয়ে দাঁড়ায়। মা হয়তো বা ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ানোর জন্যে বলে, খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো/বর্গী এলো দেশে/ বুলবুলিতে ধান খেয়েছে/ খাজনা দেবো কী সে?, _কিন্তু এর মধ্যেই সমাজকে প্রতিবাদী করে গড়ে তোলার মূলমন্ত্র মা শিখিয়ে দিচ্ছেন। মা প্রতিবাদী প্রজন্ম গড়ে তুলছেন। এভাবেই শিশু মনে লুটেরার ইতিহাসকে ছড়ার ছন্দে ঢুকিয়ে দিয়ে।
ছড়ার মধ্য দিয়েই খাঁটি বাঙালি হওয়ার বীজ সমাজের মনোজমিতে বপন করে দিয়েছেন বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লবী পুরুষ গুরু সদয় দত্ত। তিনি বাঙালিকে শৈশবেই হাতুড়ির ঘা মেরে বলেছেন,
'ষোল আনা বাঙালি হ
বিশ্ব মানব হবি যদি
শাশ্বত বাঙালি হ।'
আর এই শাশ্বত বাঙালি হওয়ার পথে যত অন্তরায় আছে তার মূলোৎপাটন করার শক্তি যুগিয়ে ছড়া নিজেই বলে উঠেছে,
'যতদিন বাঁচব ততদিন বাড়ব
রোজ কিছু শিখব রোজ দোষ ছাড়ব
যাহা কিছু করব ভাল করে করব
কাজ যদি কাঁচা হয় শরমেতে মরব।'
(গুরু সদয় দত্ত)
বাঙালিকে সামপ্রদায়িক চিন্তা থেকে বের করে আনতে ছড়ার আপ্রাণ চেষ্টার কোনো তুলনা নেই। ছড়ার এ অসামপ্রদায়িক শক্তি কালে কালে সঞ্চারিত হয়ে গেছে প্রজন্ম হতে প্রজন্মান্তরে। বাঙালির রক্তের ভেতরে অসামপ্রদায়িক চেতনার যে ফলগুধারা তাকে প্রবহমান রাখতে ছড়াই বলে উঠেছে অনুচ্চ স্বরে,
'কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক
কে বলে তা বহুদূর?
মানুষেরি মাঝে স্বর্গ-নরক
মানুষেতে সুরাসুর।, (শেখ ফজলল করিম)
অসামপ্রদায়িকতার এই শক্তির সরবরাহ মধ্যযুগে বেজেছে চমৎকারভাবে যখন খোদ মুসলিম সুলতানেরা প্রজাদের আস্থা যোগাতে মুসলিম কবি দিয়ে মঙ্গল কাব্যের বিকাশ ঘটিয়েছেন। ছড়া এ সময় আরেকটু শক্তিমান হয়ে সমাজকে বলেছে,
'মোরা একই পিন্ডের দড়ি
কেউ বা বলে আল্লাহ রসুল
কেউ বা বলে হরি।'
মাতৃভাষার ওপর যখন আঘাত আসে, ছড়া তখন এগিয়ে আসে ক্ষুরধার হয়ে। আফিমাক্রান্ত বাঙালিকে ছড়া এসে জাগিয়ে দিয়ে যায় নিধু বাবুর বদৌলতে,
'নানান দেশের নানান ভাষা
বিনে স্বদেশীয় ভাষা
পুরে কি আশা?
কত নদী সরোবর
কি বা ফল চাতকীর
ধারাজল বিনে কভু
ঘুচে কি তৃষা?'
(স্বদেশীয় ভাষা- রামনিধি গুপ্ত)
খনার বচনে ছড়া হয়ে উঠে আরো শক্তিশালী। কৃষিভিত্তিক বাঙালি সমাজের চালচিত্র পাল্টাতে খনার বচন ছিল শক্তির আধার। গর্ভবতী বৌমাকে শাশুড়ির কড়া শাসন হতে বাঁচিয়ে সুস্থ সন্তান প্রসবের প্রক্রিয়ায় খনার ছড়াধর্মী বচনের ভূমিকা অপরিসীম। গ্রামে-গঞ্জে একসময় শাশুড়িরা মনে করতেন, গর্ভবতী মায়ে বেশি খেলে পেটের বাচ্চা বড় হয়ে যাবে। এতে পেট কাটতে হবে। মানে সিজারিয়ান অপারেশন করে বাচ্চা জন্ম দিতে হবে। এই ভুল ধারণায় আগের দিনে মা হয় অপুষ্টিতে মারা যেত অথবা গর্ভস্থ শিশু অপুষ্টিতে ভুগতো নয়ত প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজন নিয়ে ভূমিষ্ঠ হতো। খনা এই অবস্থাকে পাল্টানোর জন্যে ছড়ার ছন্দে বলে উঠলো,
'আগে খাবে মা'য়ে / তবে পাবে পোয়ে।' রাতারাতি না হলেও ধীরে ধীরে এ অবস্থা পাল্টেছে।
গ্রাম্য ধাঁধার মধ্যেও ছড়া ঢুকে সমাজকে বদলাবার প্রয়াস পেয়েছে। সত্যকে চাপা দিয়ে রাখা যায় না এবং একসময় সত্য যে প্রকাশিত হয়ে ওঠে তা গ্রাম্য ধাঁধার মাধ্যমে দারুণ ভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা যখন সমাজের কাউকে ছড়ার ছলে বলতে শুনি,
'পাপে-
না ছাড়ে বাপে
খোদার অজানা পাপ নাই
মায়ের অজানা বাপ নাই।,-
(ছেলেবেলার বন্ধু-শংকরের গ্রন্থ হতে সংগৃহীত)
তখন বুঝি, কৃত কর্মের ফল শুনিয়ে ছড়া কাউকে ভালো হয়ে যাবার কিংবা সুপথে আনার চেষ্টায় লিপ্ত। এভাবে ছড়া অসঙ্গতির সমাজকে সঙ্গতির চর্চায় আনতে চেষ্টা করে।
ছড়া আমাদের স্বাধীনতায় রেখেছে অমূল্য অবদান। বৃটিশ ভারতে জাপানীদের বিরুদ্ধে সুকান্তের ছড়াতে আমরা একদিকে যেমন পাই ব্যঙ্গাত্মক পরিহাস, তেমনি পাই যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনের অনুভূতি। সুকান্ত যখন তার ছড়াকে চাবুক বানিয়ে বলেন, 'জাপানি গো জাপানি/ভারতবর্ষে আসতে কি তোর/ লেগে গেল হাঁপানি?' _তখন সাধারণ মানুষের মনে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে ঐক্য তৈরি হয়। আবার মহান একাত্তরে যখন শ্লোগান উঠেছিল, 'পিন্ডি না ঢাকা? / ঢাকা ঢাকা'-, কিংবা 'তোমার আমার ঠিকানা/পদ্মা-মেঘনা-যমুনা।'- তখন আমাদের মনে শেকড়ের প্রতি টান তৈরি হয়। আমাদের মনের গভীরে বিদ্যমান সত্তাকে মর্মমূলে স্পর্শ করে শ্লোগানরূপী ছড়া আমাদের মধ্যে তৈরি করে আত্মজাগরণের শক্তি। যুদ্ধের ময়দানে একদিকে 'জয় বাংলা' শব্দ-ব্রহ্ম যেমন আমাদের বুকে প্রেরণা দেয়, তেমনি শ্লোগানের আকারে ছড়াও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করে। 'ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা / বোয়াল মাছের দাড়ি/ ইয়াহিয়া ভিক্ষা করে / শেখ মুজিবের বাড়ি।'- এই গণছড়াটি ঊনিশশো একাত্তরে আপামর বাঙালির মনে যুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে বিজয়ের স্বপ্ন তৈরি করে দিয়েছিল।
স্বৈরাচার আমলে একদিকে রাজপথে চলছে আন্দোলন, আর অন্যদিকে গরম গরম ছড়া দিয়ে একের পর এক তৈরি হচ্ছিল ব্রহ্মাস্ত্র। আলেক্স আলীমের লেখায় ছড়া হয়ে গেল বল্লমের ফলার চেয়েও ধারাল। ছড়াকেই আমরা বলতে শুনেছি,
'ওহে দাদা নবাবজাদা
তোমার খেলা পন্ড
আন্দোলনের জোয়ার এলো
তোমার খেলা ভন্ড।'
এমনি করেই ছড়া আমাদের সমাজ বদলের চৌকষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে এসেছে যুগে যুগে।
এখন আমরা ছড়াকে ব্যবহার করছি বিভিন্ন দিবসের তাৎপর্যকে প্রসারিত করতে। এতে করে সাধারণ জনতা সেই দিবসের তাৎপর্যকে সম্মান করে দিনটি উদ্যাপনে ব্রতী হয়ে উঠে। খোকা ইলিশকে রক্ষায় আমরা ছড়ার শ্লোগানে বলছি আজকাল,
'আর ধরব না জাটকা
ইলিশ খাব টাটকা।' - মৎস্য মন্ত্রণালয়ের এই শ্লোগানটি আমাদের জাটকা রক্ষায় সত্যিকার অর্থেই উদ্বুদ্ধ করে তোলে। 'যারাই ধরে জাটকা, তাদের ধরে আটকা' _লুৎফর রহমান রিটনের এই ছড়াধর্মী বিজ্ঞাপনটির আবেদনে সাড়া দিয়ে যারা লোভে পড়ে বাংলার এই মহামূল্যবান সম্পদ নষ্ট করত, তারাও আজ ছড়াধর্মী শ্লোগানের শক্তিতে নিজেদের বদল ঘটানোর চেষ্টা করে চলেছে।
বড়দের একটা অভ্যেস আছে, ছোটদের কারণে অকারণে বকা এবং ক্ষেত্র বিশেষে নিজের দোষ ছোটর ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে হাল্কা হওয়া। আবারও ছড়া এক্ষেত্রে বড়দের সেই মানসিকতার পরিবর্তনে এগিয়ে এসে দাঁড়ায়। ছড়া নিজেই বলে ওঠে,
'তেলের শিশি ভাঙল বলে
খুকুর পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
ভারত ভেঙে ভাগ করো !
তার বেলা?
........................
........................
তেলের শিশি ভাঙল বলে
খুকুর পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
বাঙলা ভেঙে ভাগ করো !
তার বেলা?'
(খুকু ও খোকা, অন্নদাশঙ্কর রায়-১৯৪৭)
ছড়া এখানে বিপুল শক্তিতে আঘাত করে আমাদের স্বার্থবাদী রাজনীতিবিদদের, যারা গাছেরও খায়, তলারও কুড়ায় এবং যে ডালে বসে সে ডালেই কুঠার মারে।
যারা লোভে পড়ে দেশ বিক্রি করে তাদের ঘৃণা জানিয়ে ছড়া এসে দাঁড়ায় দেশপ্রেমিকের পাশে। ছড়া রাজাকারদের শ্লেষ করে, মুক্তি সেনাদের নিয়ে উল্লাস করে। ছড়া বলতে পারে অবলীলায়,
'ধন্য সবাই ধন্য
অস্ত্র ধরে যুদ্ধ করে
মাতৃভূমির জন্য।
ধরল যারা জীবনবাজি
হলেন যারা শহীদ গাজি
লোভের টানে হয়নি যারা
ভিনদেশিদের পণ্য।'
(মুক্তিসেনা- সুকুমার বড়ুয়া)
ছড়া এখানে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে একদিকে সঞ্চার করে তুলছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর অন্যদিকে মনের ভূমি কর্ষণ করে নিচ্ছে দেশপ্রেমের বীজতলা তৈরি করার জন্যে।
ছড়া বাহ্যিক সমাজ বদলের যেমন শক্তিশালী হাতিয়ার তেমনি মনের পরিবেশ পরিবর্তনেও ছড়া সুমহান অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। সমাজ বদলের এরকম এক গজাল মার্কা হাতিয়ার ছড়াকে আমরা বলতে শুনি,
'আপস আপস চতুর্দিকে, আপস জগৎময়
নানান ঢঙ্গে সবার সঙ্গে আপস করতে হয়।
আদর্শহীন রাজনীতিবিদ এবং টকশোজীবী
আপসরফায় ভরিয়ে ফেলেন পত্রিকা আর টিভি।'
(আপসকামী-লুৎফর রহমান রিটন)
বলতে দ্বিধা নেই, আজকের সমাজ তৈলজীবী সমাজ এবং আপসজীবী সমাজ। এ সমাজ গাছের যেমন খায়, তলারও তেমন কুড়ায়। এ সমাজকে বদলাতে হলে ছড়ার এক শক্ত অবদান দরকার এবং ছড়া কিন্তু সে অবদানে পিছ পা নয় কখনো। ছড়ার চাবুক চলছে বলেই আজও এ সমাজে পচন তেমন ধরেনি। তৈলবাজির সমাজকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে ছড়াও কম চতুর নয়। ছড়া কড়া হাতুড়ি হেনে এসব মানুষকে সাবধান করে বলে,
'যে যেভাবে বলে বলুক
যে যেভাবে চলে চলুক
কেউ আছে ঠিক অকারণে
কথায় কথায় তেল মারে-
আবার দেখি অনেক মানুষ
ওড়ায় কেবল কথার ফানুস
আপন সেজে কোলে বসে
বুকের ভেতর সেল মারে।'
(অন্ত্যমিল ছড়া কলাম- রাশেদ রউফ)
ছড়া-ই মনে করে আগামী দিনের সমাজ বদলের দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের হাতে। তাই নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করার জন্যে ছড়া প্রস্তুতি নেয় আজকে থেকেই। ছড়া জানে, সমাজকে বদলাতে হলে মানব কুসুমকে ফুটিয়ে তোলার আগেই পরিচর্যা করতে হবে। ছড়া সেই পরিচর্যাকে তার পংক্তিতে ধারণ করে নির্দ্বিধায় বলে,
'খোকনই তো জেগে ওঠে লক্ষ খোকন নিয়ে
বর্গী তাড়ায় যুদ্ধ করে বুকের সাহস দিয়ে।
খোকনরা তো দিনে দিনে অনেক বড় হয়
এই খোকনই রাজপুত্তুর বিশ্ব করে জয়।'
(আনজীর লিটন)
ছড়া সাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার, যার কাছে সমাজের খোল-নলচে পাল্টানোর সকল কলকব্জা আছে। ছড়ার কাছে শ্লোগান আছে, ধাঁধা আছে, বচন আছে, গানও আছে। সুতরাং সর্বগামী ছড়ার বদৌলতেই আমরা এক সমপ্রীতিঋদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সজীব সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণে সক্ষম হবো, এ হোক আমাদের আজকের প্রত্যয়।
ফজর | ৪:৩৪ |
যোহর | ১২:০৩ |
আসর | ৪:৩০ |
মাগরিব | ৬:১৮ |
এশা | ৭:৩১ |
হেরার আলো
|
বাণী চিরন্তন
|
আল-হাদিস
|
২-সূরা বাকারা ২৮৬ আয়াত, ৪০ রুকু, মাদানী পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। ৬৬। আমি ইহা তাহাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীগণের শিক্ষা গ্রহণের জন্য দৃষ্টান্ত ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ করিয়াছি।
সৌভাগ্য হচ্ছে অজস্র সুষ্ঠু কর্ম সুষমার ফল। _ইমারসন।
যে ব্যক্তি উদর পূর্তি করিয়া আহার করে, বেহেশতের দিকে তাহার জন্য পথ উন্মুক্ত হয় না।
|
করোনা পরিস্থিতি | ||
বাংলাদেশ | বিশ্ব | |
আক্রান্ত | ৭,৫১,৬৫৯ | ১৬,৮০,১৩,৪১৫ |
সুস্থ | ৭,৩২,৮১০ | ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮ |
মৃত্যু | ১২,৪৪১ | ৩৪,৮৮,২৩৭ |
দেশ | ২০০ ২১৩ | |
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। |
হ্যাঁ | না | মতামত নেই |