চাঁদপুর, বুধবার, ৯ জুন ২০২১, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮, ২৭ শাওয়াল ১৪৪২
jibon dip

সর্বশেষ খবর :

  • -
বাজেট ও মানবসম্পদ উন্নয়ন
মাছুম বিল্লাহ
০৯ জুন, ২০২১ ০০:০০:০০
প্রিন্টঅ-অ+


বাংলাদেশসহ প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশের বাজেটের সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন বাজেটের গন্ধ পাওয়ার আগেই নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া, যার ব্যতিক্রম এবারও হয়নি। তেলের দাম প্রতি লিটার ৯ থেকে ১১ টাকা এরই মধ্যে বেড়ে গেছে, বেড়েছে চাল, আলু ও পেঁয়াজের দাম। মাঠপর্যায় থেকে নীতিনির্ধারণী পর্যায় পর্যন্ত সরকারের যারা সরাসরি উপকারভোগী তারা বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে মিছিল বের করেন, সব মিডিয়ায় প্রচার করতে থাকবেন মাসের পর মাস এটি জনকল্যাণমুখী বাজেট, এটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাজেট ইত্যাদি। রাষ্ট্রের সম্পদ যারা লুট করতে থাকে তারা যাতে আরও বেশি বেশি লুট করতে পারে তার জন্যে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা থাকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জাতীয় বাজেটে। যার ফলে প্রতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তেই থাকে, সাধারণ মানুষের জন্যে 'ভ্যাট' নামক ট্যাক্সের বোঝা চাপানো হয়। যার ফলে দশ টাকার একটি পানির বোতল কিনলেও দু-তিন টাকা ভ্যাট দিতে হয়। আর দুটো জায়গায় জনগণকে ধোঁকা দেয়ার দুটো বিষয় সংযোজন করা হয়। তার একটি হচ্ছেকয়েকটি খাতের টাকা একত্র করে বলা হয় যে, শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে অমুক অমুক আইটেমের দাম কমবে। বাজেটের পর কোনো জিনিসের দাম কোনো দিন কমেনি।



 



করোনায় সজোরে কাঁপছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। দশ লাখের বেশি শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা বন্ধ আছে। অনেকে বেকার হয়ে গেছেন এবং অনেকে সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন পেশায় নিযুক্ত হয়েছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুল, কারিগরিসহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিছু কিছু এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে এবং অনেকগুলো চিরদিনের জন্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাজেটে এসব খাতে ব্যয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ প্রস্তাব দেখা যায়নি। বেসরকারি কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর কর আরোপ করা হয়েছে। তাদের আয়ের ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যেমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪৮। এভাবে যত্রতত্র এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সেখানে মানহীন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও রাঘববোয়ালদের দুর্নীতির সুযোগ করে দেয়ার পরিবর্তে সব ক্ষেত্রে মান যাতে অর্জিত হয় সেজন্যে অত্যাধুনিক মূল্যায়ন পদ্ধতি এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রচলন করার জন্যে বাজেট প্রয়োজন। সেটির কোনো উল্লেখ আমরা এই বাজেটে দেখতে পেলাম না, বরং বেসরকারি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কর নেয়ার একটি ঘোষণা দেখলাম। এ তো শিক্ষার মান বাদ দিয়ে বাণিজ্যিকীকরণের কৌশল!



 



ইংরেজি মাতৃভাষা হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের ইংরেজির শেখার ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে চীন, জাপান, কোরিয়ায়ও ইংরেজির দক্ষতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়, যদিও এই দেশগুলো প্রায় পুরোপুরি স্বাবলম্বী। আর আমরা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বহির্বিশ্বের ওপর নির্ভরশীল। তাই আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে একটি বিদেশি ভাষা কার্যকরভাবে শেখানোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। আমরা আমাদের মাতৃভাষা অবশ্যই সঠিকভাবে শেখাব, সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে এজন্যে যে, এটি আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় হাতিয়ার। আমাদের দেশের যেসব অদক্ষ শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশে কাজ করেন, তাদের বৈদেশিক ভাষা শেখানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেই হবে, এখানে গোঁজামিল দেয়া কিংবা এটিকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। ভাষাগত সমস্যার কারণে আমাদের দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিকসহ উচ্চশিক্ষিতরাও দেশের বাইরে তাদের কাঙ্ক্ষিত সম্মানী থেকে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন। বিষয়টি বারবার বলা হলেও গুরুত্ব পাচ্ছে না।



 



২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা গত বছর ছিলো ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। মাধ্যমিকে ৩৬ হাজার ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা ছিলো ৩৩ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় ৯ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা এবং গত বছর এটি ছিলো ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উন্নয়নব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ২২ কোটি, বাকিটা অপারেটিং ব্যয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে উন্নয়নব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৩২০ কোটি, বাকিটা অপারেটিং ব্যয়। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় উন্নয়নব্যয় বাবদ ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, বাকিটা অপারেটিং ব্যয়। শিক্ষাখাতে প্রতি বছর বরাদ্দের দুই-তৃতীয়াংশ ব্যয় হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানে। এটি তো অবশ্যই করতে হবে। শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন না পেলে তারা কীভাবে শিক্ষাদানের মতো মহৎ কাজে নিজেদের মনোনিবেশ করবেন?



 



করোনার কারণে বাল্যবিবাহ ও ঝরেপড়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিশুশ্রমও বাড়ছে। শিক্ষায় চলমান এই বিপর্যয় রোধকল্পে শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা আবশ্যক। উপরন্তু ইউনেসকো গঠিত দেলরস কমিশন প্রতিবেদনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রাপ্ত মোট বৈদেশিক সহায়তার ২৫ শতাংশ অর্থ শিক্ষা খাতে ব্যয় করার জন্যে যে সুপারিশ আছে বাংলাদেশের তা মেনে চলা উচিত। ২-৩ বছর মেয়াদি একটি শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে কোভিড-১৯-এর ফলে শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছে তা পুষিয়ে নেয়ার জন্যে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ১১-১২ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের ২ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ বাংলাদেশে ৫ ডলার, শ্রীলঙ্কায় ১০, ভারতে ১৪, মালয়েশিয়ায় ১৫০ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৬০ ডলার। শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত একটি যুক্তিযুক্ত সীমার মধ্যে রাখা প্রয়োজন, যা প্রাথমিক স্তরের জন্য ১:৩০, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের জন্য ১:৪০ এবং উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ১:২৫-এর বেশি নয়। এসব বিষয়ের প্রতিফলন বাজেটে ঘটেনি। তবে এমপিও কাঠামোর মধ্যে না থাকা বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের জন্যে ২০০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আর সংশোধিত (২০২০-২১) বাজেটে অবসরে যাওয়া বেসরকারি শিক্ষকদের জন্যে ৪০ কোটি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও ভবন মেরামত ও সংস্কার খাতে ৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সরকারি দপ্তরগুলোর স্বচ্ছ, জবাবদিহি ও দক্ষতার বিষয় বাজেট বক্তৃতায়ই সঠিকভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যা করা হয়নি, এবারও হয়নি। কোন সময়ের মধ্যে এবং কীভাবে দেশের নাগরিকরা সরকারি অফিসে সেবা পাবেন। অফিস আছে, বড় বড় ভবন আছে, দপ্তর আছে নেই সেবা। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মনে করেন, তারা সরকারে কাজ করেন অর্থাৎ ওপরের নির্দেশ যেভাবে আসবে সেভাবে কাজ করবেন, আর তাই সেবাপ্রত্যাশীদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যাদের সেবা দেয়ার কথা তার চেয়ে ওপরের কর্তাদের খুশি করা নিয়ে সবাই ব্যস্ত অর্থাৎ নিজেরা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত। সেবা দেবেন কখন? যে কাজটির জন্যে প্রয়োজন দুই ঘণ্টা, সেই কাজ মাসাধিককালেও সম্পন্ন হয় না সরকারি অফিসে। মনে হয় যেনো ব্রিটিশের আমলকেও হার মানিয়েছে। জনগণ এগুলো কাকে জানাবে? উৎকোচের জন্যে ফাইল চালাচালি, এলোমেলো কথা এগুলো কি এ দেশের সরকারি অফিসগুলো থেকে কোনো দিনই দূর হবে না? কে দেখবে এগুলো? আমরা দেখে, প্রত্যক্ষ করে দু-চার লাইন পত্রিকায় লিখতে পারি, তাতে তাদের যে কিছু আসে-যায় না বা তাদের কিছু হবে না তা তারাও জানেন আর এজন্যেই সর্বত্রই চলছে গা-ছাড়া ভাব।



 



লেখক : চিফ অব পার্টি : আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রোগ্রাম ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি।



 



 



 


হেরার আলো
বাণী চিরন্তন
আল-হাদিস

২-সূরা বাকারা


২৮৬ আয়াত, ৪০ রুকু, মাদানী


পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।


৬৮। তাহারা বলিল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানাইয়া দিতে বল উহা কিরূপ? মূসা বলিল, 'আল্লাহ বলিতেছেন, উহা এমন গরু যাহা বৃদ্ধও নহে, অল্পবয়স্কও নহে-মধ্যবয়সী। সুতরাং তোমরা যাহা আদিষ্ট হইয়াছ তাহা করো।'


 


 


 


অপ্রয়োজনে প্রকৃতি কিছুই সৃষ্টি করে না। _শংকর।


 


 


নামাজ বেহেশতের চাবি এবং অজু নামাজের চাবি।


 


 


ফটো গ্যালারি
করোনা পরিস্থিতি
বাংলাদেশ বিশ্ব
আক্রান্ত ৭,৫১,৬৫৯ ১৬,৮০,১৩,৪১৫
সুস্থ ৭,৩২,৮১০ ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮
মৃত্যু ১২,৪৪১ ৩৪,৮৮,২৩৭
দেশ ২০০ ২১৩
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আজকের পাঠকসংখ্যা
২৯১৩১৬৯২
পুরোন সংখ্যা