আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা আমরা কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারি, কী করে শিক্ষাব্যবস্থাকে আনন্দময় করতে পারি, কী করে জ্ঞানের প্রতি, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ, আনন্দ ও ইচ্ছা জাগিয়ে তুলতে পারি-সেই চেষ্টা আমাদের করতে হবে।
দেশের হাজারো শিক্ষার্থী বিভিন্ন অলিম্পিয়াডে দেশের হয়ে অংশ নেয়। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিজয় ছিনিয়ে আনে। জীববিজ্ঞানে শিক্ষার্থীরা ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। এটি অত্যন্ত আশার কথা। গত বছর করোনাকালেও আমাদের শিক্ষার্থীরা দুটি বোঞ্জ পদক লাভ করেছে। এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যে তাদের এই অর্জন আশা জাগায়। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আয়োজকদের। একই সঙ্গে সারাদেশের সব শিক্ষার্থীকে অভিনন্দন। বিজয়ী কয়েকজন হবে। কিন্তু অংশ নেওয়াটাই বড় ব্যাপার। এর মধ্যে অনেক কিছু শেখা যায়, জানা যায়, নিজেকে তৈরি করা যায়।
আমাদের তরুণদের প্রতিভার কমতি নেই। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও তরুণরা নানা ক্ষেত্রে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছে, জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে দেশের জন্যে সম্মান বয়ে আনছে।
গবেষণার ক্ষেত্রেও আমাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে-তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছি। বিজ্ঞানের কোনো বিকল্প নেই, প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পেয়েছি। আমাদের এগিয়ে যেতেই হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শান্তিময় বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
অসম্ভব ত্যাগ ও এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ পেয়েছি। এ দেশকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষা। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা যেনো আমরা ঘরে তুলতে পারি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যেসব অভীষ্ট লক্ষ্য আমাদের রয়েছে, তা পূরণ করতে গেলে এবং আমাদের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হলে শিক্ষাই হতে পারে প্রধান হাতিয়ার। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিরও কোনো বিকল্প নেই।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ থেকে যেনো আমরা পিছিয়ে না পড়ি। জ্ঞান-বিজ্ঞানে, পরিবর্তনে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে।
সনদসর্বস্ব, ভীষণ রকমের পরীক্ষানির্ভর, নিরানন্দ একটা শিক্ষাব্যবস্থা-আমার মনে হয় দ্রুত পাল্টে ফেলা প্রয়োজন। অবশ্যই মেধা যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এবং এ জন্য শুধু পরীক্ষাই দিতে হবে তা নয়। জিপিএ-৫ পাওয়াই মেধা যাচাইয়ের একমাত্র মাপকাঠি নয়। এই যে শিক্ষার্থীরা অলিম্পিয়াডে অংশ নিচ্ছে আনন্দের মধ্য দিয়ে, দেশে-বিদেশে সম্মানিত হচ্ছে, স্বীকৃতি পাচ্ছে। মূল্যায়নের নানা পদ্ধতি আছে। কোনটা আমরা ব্যবহার করবো, তা নিয়ে ভাবছি। আমরা কষ্টকর লেখাপড়া নয়, আনন্দদায়ক শিক্ষা চাই।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি, অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তুলতে হবে। তারা যে বিষয়টি পড়ছে সেই বিষয়টি যেনো তারা অনুধাবন করতে পারে, বুঝতে পারে, গভীরতায় প্রবেশ করতে পারে এবং সেটি সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে। কোথায় বিজ্ঞান নেই! জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিজ্ঞান বিরাজমান। শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর প্রয়োজন রয়েছে। প্রকৃতির নানা বৈচিত্র্য থেকে শিক্ষার্থী শিখবে। প্রকৃতি-প্রতিবেশের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা, প্রকৃতিকে জানার প্রয়োজনীয়তা অনেক। শিক্ষাকে আনন্দদায়ক কীভাবে করা যায়, আমরা তা নিয়ে ভাবছি। শিক্ষার্থীদের অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তোলা, আনন্দের সঙ্গে শেখা এবং অর্জিত জ্ঞানের প্রায়োগিক ব্যবহার না থাকলে সে শিক্ষার মূল্য নেই।
সারাদেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো বিজ্ঞানাগার রয়েছে। আমরা এখনও দেশের সব স্থানে পর্যাপ্ত বিজ্ঞানাগারের ব্যবস্থা করতে পারিনি। অনেক স্থানে থাকার পরও সঠিক ব্যবহার নেই। বেশিরভাগ স্থানে বিজ্ঞানের ব্যবহারিক পরীক্ষা নামমাত্র হয়। ফলে বাস্তব ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা সঠিক ব্যবহারিক পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রতিটি জেলায় একটি করে ভালো মানের বিজ্ঞানাগার স্থাপনের সামর্থ্য সরকারের রয়েছে। নোটিশ টানিয়ে ব্যবহারিক খাতা করে দেওয়ার বিজ্ঞাপনও আমি দেখেছি। আমি ভাগ্যবান ছিলাম, আমি যে প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেছি সেখানে সঠিকভবে ব্যবহারিক খাতা তৈরি করতে হতো। অন্যের সাহায্য নেওয়ার বা করে দেওয়ার সুযোগ ছিলো না। এতে অন্যরকম একটা আনন্দ ছিলো। তাই নিজের কাজ নিজে করা ও শেখার আনন্দটুকু পাওয়ার অধিকার শিক্ষার্থীর রয়েছে। তাই প্রকৃতির মধ্যে যে বৈচিত্র্য রয়েছে, তা যদি বুঝতে পারি তাহলে আমাদের সমাজে নানাভাবে যে সংকীর্ণতা আরোপিত হচ্ছে, অন্তত সেই আরোপিত সংকীর্ণতাকে আমি এড়াতে পারবো। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্যে যে সমৃদ্ধি আছে, তা জানতে পারলে আমার ধর্মবোধ, জাতীয়তাবোধ, গায়ের রং, চিন্তাসহ সবকিছুর মধ্যে যে বৈচিত্র্য আছে, তা ধারণ-গ্রহণ করতে পারব। জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে দক্ষ, যোগ্য মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন, চিন্তাচেতনায় অগ্রসর বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হয়ে থাকলে প্রকৃতির বৈচিত্র্যের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচিত, অভ্যস্ত করে তোলা অবশ্যই প্রয়োজন।
বিজ্ঞানমনস্ক, আধুনিক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রযুক্তিনির্ভর নাগরিক গড়ে তুলতে হলে আমাদের পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আনতে হবে, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ লাগবে। শিক্ষার গুণগত পরিবর্তনে আপনাদের সহযোগিতা অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা চাইবো। বাংলাদেশে যতো অলিম্পিয়াড হয় তার সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১৬ আনা সম্পৃক্ত থাকা উচিত এবং এক্ষেত্রে যতো রকমের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন, সবই এই মন্ত্রণালয়ের করা উচিত বলে আমি মনে করি। সারাদেশে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো বিজ্ঞানাগার করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। বিজ্ঞানের প্রতি গভীর ভালোবাসা আমাদের শিক্ষার্থীদের থাকতে হবে। একই সঙ্গে নিজের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেও আমরা গভীরভাবে ভালোবাসবো।
[জীববিজ্ঞান উৎসবের জাতীয় পর্যায়ে সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির দেয়া বক্তব্যের ঈষৎ সংক্ষিপ্ত অংশ। সূত্র : সমকাল]
ফজর | ৪:৩৪ |
যোহর | ১২:০৩ |
আসর | ৪:৩০ |
মাগরিব | ৬:১৭ |
এশা | ৭:৩১ |
হেরার আলো
|
বাণী চিরন্তন
|
আল-হাদিস
|
২-সূরা বাকারা ২৮৬ আয়াত, ৪০ রুকু, মাদানী পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। ৬৮। তাহারা বলিল, আমাদের জন্য তোমার প্রতিপালককে স্পষ্টভাবে জানাইয়া দিতে বল উহা কিরূপ? মূসা বলিল, 'আল্লাহ বলিতেছেন, উহা এমন গরু যাহা বৃদ্ধও নহে, অল্পবয়স্কও নহে-মধ্যবয়সী। সুতরাং তোমরা যাহা আদিষ্ট হইয়াছ তাহা করো।'
অপ্রয়োজনে প্রকৃতি কিছুই সৃষ্টি করে না। _শংকর।
নামাজ বেহেশতের চাবি এবং অজু নামাজের চাবি।
|
করোনা পরিস্থিতি | ||
বাংলাদেশ | বিশ্ব | |
আক্রান্ত | ৭,৫১,৬৫৯ | ১৬,৮০,১৩,৪১৫ |
সুস্থ | ৭,৩২,৮১০ | ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮ |
মৃত্যু | ১২,৪৪১ | ৩৪,৮৮,২৩৭ |
দেশ | ২০০ ২১৩ | |
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। |
হ্যাঁ | না | মতামত নেই |