ঈদের দিন যত ঘনিয়ে আসে আমার আনন্দ ততখানি কমে যায়। প্রথম দিকে কিছুটা ভালোলাগার অনুভূতি কাজ করে। টাকার জোর কমতে শুরু করলে শরীর-মন দুটোই অসাড় হয়ে আসে। মুখের হাসি শুকিয়ে যায়। জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখতে হয়। কারণ আমার মুখ মলিন দেখলে স্ত্রী ক্ষ্যাপে যান। বলতে থাকেন, সারা বছর তো আর ঈদ থাকে না। বছরে একবার কেনাকাটা করি। তাও তোমার মুখ পেঁচার মত করে রাখ। মানুষের বউদের দেখি সারা বছর মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে। তাদের কোনো দিন একই কাপড় দুবার পরতে দেখি না। অনেকে ভারত পর্যন্ত যায় ঈদের কেনাকাটা করতে। আর তুমি ঢাকার মার্কেটে যেতে বিরক্ত হও। আমি স্ত্রীর কথার প্রতিবাদ করতে চাই না। মুখ হাসি হাসি করে স্ত্রীর পিছন পিছন হাঁটতে থাকি। শপিং ব্যাগ হাতে স্ত্রীর পিছন পিছন হাঁটা আমার সবচাইতে কষ্টের বিষয়। রমজানের শুরুতে স্ত্রীর যুক্তি হল ভীড় কম। মাঝামাঝি সময়ে যুক্তি হল অনেক ডিজাইন এসেছে। শেষের দিকে যুক্তি হল তুলনামূলক সস্তায় কেনা যাবে। ফলে পুরো মাস জুড়ে আমাকে ঢাকার মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে বেড়াতে হয়। আমার স্ত্রী আমাকে ছাড়া ঈদের কেনাকাটা করবে না কোনো মতেই। একান্ত বাধ্য হয়েই তার সাথে যেতে হয়। মার্কেটে মধ্যবয়সী সুন্দরী নারীদের দেখলেই মনে হয় কোথায় যেন পরিচয় হয়েছিলো। মুখটা কেমন জানি চেনা চেনা। কখনও এই মধ্যবয়সী নারীদের প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলি। স্ত্রী রেগে বলেন, তোমার চোখ কোথায় থাকে? আমার সাথে থাকলে হারায় কী করে? তোমাদের পুরুষ মানুষের এই অভ্যাস গেল না-কোনো নারীকে দেখলেই হা করে তাকিয়ে থাকা। যেন নায়িকা মৌসুমীকে দেখছ। মার্কেটে এত নারী আসছে ক'জন পুরুষের দিকে অমন হা করে তাকিয়ে থাকে? নারীরা মার্কেটে পুরুষ দেখতে আসে না। আমি কাচুমাচু করে অজুহাত দাঁড় করানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তাতে স্ত্রীর রাগ কমে না। মাঝে মধ্যে মার্কেটে পরিচিত কারো কারো সাথে দেখা হয়ে যায়। ভাবীরা কেউ কেউ মন্তব্য করেন, ভাইতো দেখি সব সময় আপনার সাথেই আছে। এটাই ভালো। খানিক কথা হয়, তারপর আবার স্ত্রীর সাথে দোকানে দোকানে ঘুরা। পরিচিত সেলস্ম্যানরা স্বাগত জানায়। তারা সমস্বরে আমার স্ত্রীর পছন্দের তারিফ করেন। বলতে থাকেন, ভাবীকে উল্টা পাল্টা কিছু বুঝানো যায় না। তিনি খাঁটি জিনিস ঠিকই চিনতে পারেন। আমরা এমন উন্নত রুচি সংস্কৃতির সমঝদার ক্রেতা খুবই কম দেখতে পাই। আমার স্ত্রীর ঠোঁটের কোণে তখন হাসি ঝুলে। আমার চোখে চোখ পড়তে বুঝতে পারি চোখের ভাষা। স্ত্রীর চোখ বলে, তুমি আমাকে এতকাল চিনতে পার নি। মানুষ কিন্তু ঠিকই আমাকে চিনতে পারে। সেলস্ম্যানদের বুদ্ধির কাছে আমি পরাজিত হই। আমার পকেট দ্রুত খালি হতে শুরু করে। পা ব্যাথা করে। কোমরটা চিন চিন করে। মাথা ঝিমঝিম করে। বাসায় ফিরে যেতে মনটা আকুল হয়ে উঠে। শরীরটা বিছানার জন্যে অস্থির হয়ে পড়ে।
শেষ পর্যন্ত স্ত্রীর দয়া হয়। বাসায় ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ি। দশ মিনিট যেতেই স্ত্রীর ডাক পড়ে, শুনছো। দেখতো ড্রেসটা কেমন হয়েছে? আমি বলি, বেশ মানিয়েছে। পাশের বাসার ভাবীর মত ইতিবাচক। ছেলে-মেয়েরা বলেছে, সুন্দর লাগছে। শুধু কাজের মেয়ে মর্জিনা বলেছে, খালাম্মা এই ড্রেসটায় আপনাকে বুড়া বুড়া লাগে। মুহূর্তে স্ত্রী ড্রেসটা খুলে ফেললেন। আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললেন, আজ পর্যন্ত সত্যি কথা বলতে পারলে না। একটা কাজের মেয়ে মুখের উপর সত্যি বলতে পারে আর তোমরা মিথ্যে বলে পালিয়ে যেতে চাও। এভাবেই স্ত্রীর ড্রেস রিহার্সেল চলে। আমাদের মতামত শুনে কাজের মেয়ে মর্জিনার মত গ্রহণ করে। গভীর রাতে সিদ্ধান্ত হয় কোন্ কোন্ ড্রেসগুলো বদলানো হবে। আমার উপর হুকুম জারি হয় বিকেল ৪ টার মধ্যে বসুন্ধরা সিটিতে হাজির হওয়ার। আমি অফিস থেকে ৩ টার দিকে বের হয়ে পড়ি। বসুন্ধরা সিটিতে হাজির হয়ে মোস্তফা মার্টে ঢুকি। অবাক হয়ে যাই তাদের কালেকশন্স দেখে। ক্রেতাদের ভীড়। সামর্থ্যবান ক্রেতারা নীরবে কিনে যাচ্ছেন। বিল কাউন্টারে দাঁড়ায়ে দেখলাম মানুষ হাসিমুখে বিল পরিশোধ করছে। আমি বিল পরিশোধ করতেই বেশি কষ্ট পাই। মোবাইলে স্ত্রীর ফোন আসে। আমি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাই স্ত্রীর কাছে। শুরু হয় ড্রেস চেঞ্জের কাজ। দোকানের সব রকম ড্রেস দেখে অবশেষে চেঞ্জ। এভাবেই চলে রাত দশটা পর্যন্ত। মাঝখানে আটতলায় ইফতার বিরতি হল আধ ঘণ্টার।
আমার ছেলেবেলার ঈদের কথা মনে পড়ে। আমাদের কত কম চাহিদা ছিল। একটা জামা, একটা প্যান্ট, একজোড়া জুতা হলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতাম। ঈদের দিন সকালে কসকো সাবানে গোসল করে ত্রিফলা কেশ তেল মাথায় দিয়ে বেরিয়ে পড়তাম। দুপুরের দিকে বাড়ি ছুটে আসতাম পোলাও-কোরমা খাবার জন্যে। ভাবতে অবাক হই কত অল্পতেই তুষ্ট হতাম। সমাজ কতখানি বদলে গেছে তা অনেক সময় কল্পনাও করতে পারি না। এত কেনাকাটা করার পরও অনেকেই সন্তুষ্ট হতে পারেন না। আমি বাসায় মাঝে মধ্যে সন্তানদের হেদায়েত করতে কিছু বয়ান করি। যেমন-অপচয় করা অন্যায়, অপব্যয় করাও অন্যায়। আমার ছোট মেয়ে কাশি ঝাড়ে। সে বলে, অপচয় না হলে অপব্যয় না হলে উন্নয়ন হবে কী করে? তুমি এক শার্ট, এক প্যান্ট দিয়ে বছর কাটিয়ে দিলে কাপড়ের দোকানে বেচাকেনা বন্ধ হয়ে যাবে। সবাই মিলে বাসায় রান্নার ব্যবস্থা করলে হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। আমি মেয়ের যুক্তি শুনে চুপ করে থাকি। স্ত্রীর দুঃখ ক্রমেই বাড়ে, তিনি তার ইচ্ছামত শপিং কখনও করতে পারেন নি এই অভিযোগ অব্যাহত। স্ত্রীর দুঃখে আমি কাতর হই। তার ইচ্ছা পূরণে আমি সত্যিই অক্ষম। আমার নিকটতম আত্মীয় স্বজনকে মনে পড়ে কিন্তু উপহার পাঠাই না। শুধু মনে পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে মনে হয় ঈদের আবেগকে পুঁজি করে পকেট শূন্য করার একটা কৌশল মাত্র। আমার মেয়ের কথা মনে পড়ে, অপচয় অপব্যয় না হলে উন্নয়ন হবে না। ঈদ মোবারক।
হাসান আলী : বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক
ফজর | ৪:৫৮ |
যোহর | ১১:৪৫ |
আসর | ৩:৩৬ |
মাগরিব | ৫:১৫ |
এশা | ৬:৩১ |
হেরার আলো
|
বাণী চিরন্তন
|
আল-হাদিস
|
২০-সূরা : তা-হা ১৩৫ আয়াত, ৮ রুকু, মক্কী পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্ নামে শুরু করছি। ৪৮। ‘আমাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করা হইয়াছে যে, শাস্তি তো তাহার জন্য, যে মিথ্যা আরোপ করে ও মুখ ফিরাইয়া লয়।’ দয়া করে এই অংশটুকু হেফাজত করুন আগে সময় সম্বন্ধে সচেতন হও, তারপর কাজ করো। -সিন্ডেলা। পরনিন্দাকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। - হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) |
করোনা পরিস্থিতি | ||
বাংলাদেশ | বিশ্ব | |
আক্রান্ত | ৭,৫১,৬৫৯ | ১৬,৮০,১৩,৪১৫ |
সুস্থ | ৭,৩২,৮১০ | ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮ |
মৃত্যু | ১২,৪৪১ | ৩৪,৮৮,২৩৭ |
দেশ | ২০০ ২১৩ | |
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। |
হ্যাঁ | না | মতামত নেই |