পরিশ্রম একজন মানুষকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা এনে দেয়। পরিশ্রমী ও আত্মপ্রত্যয়ী মানুষদের একজন ডিপ্লোমা কৃষিবিদ উপ-সহকারী কৃষি অফিসার (অবঃ) মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া। যিনি সবসময় মানুষকে কৃষি বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। তিনি এখন কৃষক হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। একের পর এক কৃষি কাজে বিপ্লব ঘটিয়ে চলছেন। এতে কেউ কেউ সমালোচনা করলেও তিনি মোটেও বিচলিত নন। কৃষি কাজে লোকসান নয়, স্বাবলম্বী হওয়া যায় এটা বোঝাতে কৃষি অফিসার থেকে কৃষক হয়েছেন তিনি।
তিনি হাজীগঞ্জ উপজেলার ৩নং কালোচোঁ ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের হাজী আবদুল আলীম মুন্সীর প্রথম পুত্র মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া। দীর্ঘদিন চাকুরি করার পর বর্তমানে একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে বাকি জীবন পার করতে চান তিনি। তাই তিনি নিজ এলাকায় বাবার সম্পত্তির উপর ১ একর জায়গা জুড়ে পরিকল্পিত কৃষি ও বনায়ন করেছেন। তাঁর সবজি বাগানের মধ্যে লাল শাক, লাউ, আলু, কুমড়া, ছিম, কচু ইত্যাদি নিয়ে বাড়ি সাজানো হয়েছে। এতে স্থানীয় ও বিদেশী ফল এ দেশের উষ্ণ-অউষ্ণ জলবায়ুতে জন্মে বলে স্বাদে, গন্ধে, আকারে ও ফলনে নানা বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়েছে। সফিউল্লাহ মিয়া নিজ গ্রামে নানা রকমের ফল, সবজি উৎপাদন করে নিজ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে চলছেন এবং অন্যদেরও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তার বিভিন্ন ভাবনা, স্বপ্ন, প্রত্যাশা নিয়ে তার সাথে কথা বলেন কৃষি কণ্ঠের বিভাগীয় সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুর রহমান গাজী। সাক্ষাৎকারটি আজ প্রকাশিত হলো।
কৃষিকণ্ঠ : কেমন আছেন ?
মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া : আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।
কৃষিকণ্ঠ : কৃষি অফিসার থেকে কৃষক হয়েছেন কী উদ্দেশ্যে?
মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া : আমি এখানে থেকেই পড়াশোনা করেছি এবং ছোট থেকে বড় হয়েছি। মাটি ও মানুষের ভালোবাসা নিয়ে নিজ এলাকার মানুষের সাথে বসবাস করতে চাই। এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবাসে। আমিও তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে চাই।
দীর্ঘদিন চাকুরি করার পর বর্তমানে একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে বাকি জীবন পার করতে চাই। বাবার সম্পত্তির উপর ১ একর জায়গা জুড়ে পরিকল্পিত কৃষি ও বনায়ন শুরু করেছি। আমি আমার কর্মজীবনে দেখেছি, কৃষকরা বলতো তাদের কৃষি কাজে নাকি লোকসান হয়। মূলত কৃষি কাজে লোকসান হয় কিনা সেটা কৃষকদের বোঝাতে মূলত আমি কৃষক হয়েছি। নিজ গ্রামে নানা রকমের ফল, সবজি উৎপাদন করে নিজ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে চলছি এবং অন্যদেরও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি।
কৃষিকণ্ঠ : এ ক্ষেত্রে আপনার উদ্দেশ্য কি সফল হয়েছে?
মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া : হ্যাঁ, আমার উদ্দেশ্য সফল হতে চলছে। আমি আমার অবসর জীবনটুকু কৃষি কাজেই অতিবাহিত করতে চাই এবং আমার গ্রামের যে সকল কৃষক আছে তাদের নিয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। নিজ গ্রামে নানা রকমের ফল, সবজি, পশু-পাখি পালন করে নিজ পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ,আত্মীয়-স্বজনসহ অন্যদেরও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ হয়েছে আমার।
কৃষিকণ্ঠ : এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে আপনার কাজের গ্রহণযোগোতা কেমন মনে হয়, এ ব্যাপারে উপলব্ধি করেছেন কি?
মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া : এ বছর লাল শাক, আলু, ধনিয়া পাতা, লাউ, কুমড়া ও বরবটি চাষ করেছি। কোনো রকম কীটনাশক বা বালাইনাশক ছাড়াই সবজি উৎপাদন করেছি। একটি গাছেও ভাইরাসের আক্রমণ হয় নি। আমার আলুর মধ্যে একটি দাউদ বা পোকার আক্রমণও হয় নি। এ দৃশ্য এলাকাবাসী দেখে অবাক হয়েছেন। এলাকাবাসীর পারিবারিক সবজি প্রয়োজন হলে আমার কাছ থেকে ক্রয় করেন। সবার জানা আমার সবজি চাষ বিষ মুক্ত।
কৃষিকণ্ঠ : বিভিন্ন সবজি চাষে আপনার সাফল্য সম্পর্কে কিছু বলুন?
মোঃ সফিউল্লাহ খান : ১২ শতাংশ জমিতে ডায়মন্ড আলু চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ৮ হাজার ২শ' ৬০ টাকা। আর আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী সবাইকে দিয়ে ২৮ মণ আলু বিক্রি করে আমার আয় হয়েছে ১০ হাজার ৩শ' ৫০ টাকা। ঢেঁড়স (সুমি জাতের) চাষ করেছি ৪ শতাংশ জমিতে। এতে খরচ হয়েছে ২ হাজার ২শ' ৮০ টাকা। নিজে খেয়ে ও আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে ৩ হাজার টাকার ঢেঁড়স বিক্রি করেছি। ৬ শতাংশ হাইব্রিড প্যাসিফিক ১১ জাতের ভুট্রা আবাদ করি। এতে খরচ হয় ২ হাজার টাকা। আয় হয় ৩ হাজার ২শ' ৫০ টাকা। তাছাড়া আলুর জমির পাশে ৩ শতাংশ জমিতে মিশ্র ফসল হিসেবে ধনিয়া, পালং শাক, মুলা ও লাল শাকের আবাদ করি। অকাল বৃষ্টির কারণে একটু সমস্যা হলেও ফলন ভালই পেয়েছি। আলু ক্ষেতের জমির আইলে ৮টি মিষ্টি কুমড়ার মাদা করি। তা থেকে শতাধিক মিষ্টি কুমড়া সংগ্রহ করতে পেরেছি। তার পাশাপাশি ৪টি বর বটির মাদা করেছিলাম। তা থেকে প্রায় ১২ কেজি বরবটি উত্তোলন করেছি। কৃষিকণ্ঠ : আপনার এ কাজে অর্থ কীভাবে যোগান দিয়েছেন ?
মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া : আমার চাকুরির অবসরকালীন ভাতা থেকে কিছু অংশ কৃষি কাজে ব্যয় করি এবং এ থেকেই সাংসারিক প্রয়োজন মিটাচ্ছি।
কৃষিকণ্ঠ : আপনার কি কোনো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আছে?
মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া : হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। কৃষি কাজের পাশাপাশি একটি মুরগীর খামার ও গরু মোটা-তাজাকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ইচ্ছা আছে।
কৃষিকণ্ঠ : আপনার চাকুরিজীবনের সাফল্যের কিছু কথা বলুন।
মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া : চাকুরি করেছি প্রায় ৩৬ বছর। এ সময়ের মধ্যে বেশ কিছু জায়গাতেই চাকুরি করেছি বেশ সুনামের সাথে। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের স্বীকৃতি স্বরূপ ক্রেস্ট এবং নগদ অর্থ পেয়েছি। সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্যে স্বীকৃতিস্বরূপ ক্রেস্টও সম্মাননা পেয়েছি।
কৃষিকণ্ঠ : আপনার পরিবারের সদস্য সংখ্যা কয়জন?
মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া : আমার স্ত্রী ও আমার দুই কন্যাসহ ৪জন ছিলো। এখন বর্তমানে আমরা স্বামী-স্ত্রী। দু মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। প্রথম মেয়ে রোকসানা পারভীন মিলি। তাকে কচুয়ার মোঃ গাউছ পাটওয়ারীর নিকট পাত্রস্থ করি। বড় জামাতা বিজিবিতে কর্মরত আছেন। মেয়ে একজন আদর্শ গৃহিণী। আর ছোট মেয়ে সানজিদা নাজনীন পলি। তাকে বিয়ে দিয়েছি ফেনী জেলার মোঃ আলাউদ্দিন পাটওয়ারীর নিকট। তিনি প্রবাসী। ছোট মেয়ে এলবিতে প্র্যাকটিস করছেন। এছাড়া আমার স্ত্রী মোসাম্মাৎ রোকেয়া বেগম। তিনি আনসার ভিডিপি হাইমচর উপজেলার প্রশিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন এবং হাইমচর উপজেলার আনসার ভিডিপির ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা হিসেবে কর্মরত আছেন। আর বাবা হাজী মোঃ আবদুল আলীম মুন্সী ও মা মিসেস আতিকুন নেসা। আমরা ৪ ভাই, চার বোন। সবাই আমরা প্রতিষ্ঠিত।
কৃষিকণ্ঠ : আমাদের সময় দেয়ার জন্যে কৃষিকণ্ঠের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনার জন্যে শুভ কামনা রইলো।
মোঃ সফিউল্লাহ মিয়া : আমার কাজের মূল্যায়ন করে আমকে উৎসাহ-উদ্দীপনা যুগিয়েছেন, আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকেও ধন্যবাদ।
ফজর | ৪:৫৮ |
যোহর | ১১:৪৫ |
আসর | ৩:৩৬ |
মাগরিব | ৫:১৫ |
এশা | ৬:৩১ |
হেরার আলো
|
বাণী চিরন্তন
|
আল-হাদিস
|
চোখকে দেহের আলো বলা যায়।
পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। |
করোনা পরিস্থিতি | ||
বাংলাদেশ | বিশ্ব | |
আক্রান্ত | ৭,৫১,৬৫৯ | ১৬,৮০,১৩,৪১৫ |
সুস্থ | ৭,৩২,৮১০ | ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮ |
মৃত্যু | ১২,৪৪১ | ৩৪,৮৮,২৩৭ |
দেশ | ২০০ ২১৩ | |
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। |
হ্যাঁ | না | মতামত নেই |