গত ৪ মার্চ চাঁদপুর সদর উপজেলার একটি দেয়ালে মৎস্য সপ্তাহ বিষয়ক প্রচারপত্র দেখতে পেলাম। এ উদ্যোগটি অত্যন্ত বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী বিধায় বেশ খুশি হলাম। এতে জনগণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। আর মাছে-ভাতে বাঙালি-এ প্রবাদ বাক্যটির সত্যতা নিয়েই কিছু লেখার প্রয়াস নিলাম।
একদিন ছিলো যখন বাঙালির ঘরে গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা দুধের গরু ছিলো। তখন যে কোনো দম্পত্তিকে আশীর্বাদ করতে হলে বলতো, দীর্ঘজীবী হও বৎস থাকো দুধে-ভাতে।
আজ সে দিন কোথায় গেলো ? এখন বাংলায় ঘরে ঘরে হতাশার ছায়া বিরাজমান। সাম্প্রতিক সময়ে এদেশে ৬০% লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে। পত্রিকান্তরে দেখা যায়, বেশ কিছু লোক অনাহারে, অর্ধাহারে অস্তিচর্মসার দেহ নিয়ে দিনাতিপাত করছে। বেশ কিছু দিন পূর্বে একটি পত্রিকায় 'ক্ষুধায় জ্বালা' শীর্ষক কলামে দেখা যায় তিনটি অনাহারি শিশু বেকারি হতে সংগ্রহ করা কিছু গুঁড়ো বিস্কুট দিয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করছে। এরূপ ঘটনা অহরহই ঘটছে।
এককালে আমাদের সোনার বাংলায় নদী, নালা, খাল, বিল, হাওর-বাওর, পুকুর ডোবায় প্রচুর পরিমাণ মিঠা পানির প্রবাহমান ছিলো। এ পানি প্রবাহ সুস্বাদু মাছের চারণভূমিরূপে ব্যবহৃত হতো। গ্রীষ্ম, বর্ষা কখনোই পুকুর নদী-নালায় প্রয়োজনীয় পানির অভাব হতো না। এসব নদী, নালা ও খাল-বিল নানা প্রকার মাছে পরিপূর্ণ থাকতো এবং এতে অসংখ্য মাছের ক্রীড়ারত লাফালাফি দৃষ্টিগোচর হতো।
কালের ঘূর্ণিতে আজ এসব মাছের অনেক প্রজাতি লোপ পেয়েছে। কিছু সংখ্যক মাছ এখনো হাট-বাজারে দৃশ্যমান হয় কিন্তু তা ক্রেতা সাধারণের নাগালের বাইরে। অধিকাংশ হাট-বাজারেই মাছের আকাল প্রকটমান। এখন সাগর হতে স্বাদবিহীন আহরিত মৎস্য দ্বারা দেশের চাহিদা পূরণ করতে সচেষ্ট হন। ইদানীং সেখানেও মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। আরো দেখা যায় মহাসাগরে আহরিত মাছের ট্রলারগুলো শূন্য হাতে ফিরে আসছে। বেশ কিছু দিন পূর্বে আমাদের দেশের নদী, নালা ও খাল-বিলে দেশিয় মাছের প্রাচুর্য ছিলো। প্রত্যেক পবিারের পুকুরগুলো নানা প্রকার মাছে পরিপূর্ণ ছিলো। এসব মাছের মধ্যে পুঁটি, খলিশা, কৈ, মাগুর, শিং, শোল, গজার, চিতল, বোয়াল, রুই মৃগেল, কাতল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বর্ষার আগমনে এসব মাছের মহোৎসবে নদী, নালা, খাল-বিল, পুকুর, ডোবা মাছের ছলাৎ-ছলাৎ শব্দে মুখর হয়ে উঠতো। হাওর, বিলে মাছের খেলা দর্শক মাত্রই বিমোহিত হতো। পদ্মা, মেঘনা, ধলেশ্বরীতে ইলিশ মাছের ছড়াছড়ি ছিলো দর্শনীয়। বর্ষার পানি প্রবাহে গভীর পানির মাছ ইলিশ উজানে ঝাঁকে ঝাঁকে প্রবেশ করতো। অনেক সময় মেঘনা, পদ্মার জেলেরা মাছের অভাবে জাল ফেলে দিতে বাধ্য হতো।
মাছের রাজা ইলিশের সুনাম সর্বজন বিদিত। তবে পদ্মার ইলিশের স্বাদই ছিলো আলাদা। চাঁদপুর নদী বন্দর ও রেলপথে এসব ইলিশ প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি হতো। তাছাড়াও প্রচুর পরিমাণ পাঙ্গাস, আইড়, বোয়াল, কাতল পাওয়া যেতো।
মাছের আকালের জন্যে চাক্ষুষ দৃশ্যমান মিঠা পানির অভাব। আর এ জন্যে দায়ী আমাদের প্রতিবেশী ভারত। এ পর্যন্ত তারা ৫৪ নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ অন্যদিকে নিয়ে গেছে। যার জন্যে আমরা পানির অভাব তীব্রভাবে অনুভব করছি। এছাড়াও কীটনাশক ও রাসায়নিক সার এবং কারেন্ট জাল দ্বারা সমূলে মাছের গোষ্ঠী ধ্বংস করে দিয়েছে। আরো রয়েছে জনাধিক্য। যার প্রেক্ষিতে নদী-নালা, পুকুর-ডোবা ভরাট করে জনবসতির ব্যবস্থা করছে। আমাদের পাঁচটি পুকুর ছিলো। এখন মাত্র একটি পুকুর কোনো রকম টিকে আছে। তাও মনে হয় অল্প কয়েকদিন পড়ে মানব বসতি সমধিত দালানকোঠায় ভরে যাবে।
এছাড়া রয়েছে জাটকা ধরা যা প্রতিরোধের জন্যে সরকার বহু প্রচেষ্টা নিয়েও এগুতে পারছে না। প্রতিদিনই পত্রিকান্তরে কারেন্ট জাল ও জাটকা দেখা যায়। যদিও এ ব্যাপারে সরকার সজাগ রয়েছে। কিন্তু তাতেও সম্পূর্ণ সফলতা লাভ করছে না। এ ব্যাপারে সচেতনতাবিহীন ও অপরিণামদর্শী জেলে সম্প্রদায়ের অদূরদর্শিতা এর জন্যে সর্বতোভাবে দায়ী। এ ক্ষেত্রে গণসচেতনা একান্ত আবশ্যক।
এ গণসচেতনতার জন্যে সেন্টর ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস) নামক সংস্থা ২০০৭ সাল থেকে চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তরে ১ হাজার ২শ' ৯৮ জন জেলে পরিবারকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাদেরকে বিকল্প আয়ের কর্ম সংস্থানের জন্যে ঋণ সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে যা ইলিশের প্রিয়ডের সময় জেলে পরিবারের কাছ থেকে কোনো প্রকার কিস্তির টাকা নেয়া হয় না। তাদেরকে ঋণ সুবিধা ছাড়াও গাভী পালনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, কৃষির উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং চাঁদপুর সদরে ১০ জন তালিকাভুক্ত জাটকা মৎস্যজীবীদেরকে পশু চিকিৎসা করার জন্যে সপ্তাহব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এ সমস্ত কাজের পাশাপাশি সিএনআরএস ২০০৯ সাল থেকে চাঁদপুর সদরে 'এনআরজি' ন্যাচারাল রিসোর্স গভর্নেন্স অর্থাৎ প্রাকৃতিক সম্পদের সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
কীটনাশক রাসায়নিক সব যে মৎস্য বংশ ধ্বংস করছে তা নয়, এমনকি কিছু সংখ্যক মৎস্য ভক্ষক প্রাণীকুল পর্যন্ত বিলীন করছে। চিল, মাছরাঙা প্রজাতির মৎস্যভক্ষক প্রাণী আজ চোখেই পড়ে না। বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্রভাবে সাপ, ব্যাঙ প্রায় নির্মূল হবার উপক্রম হয়েছে। কারেন্ট জালে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ কোনো প্রকার মাছই রক্ষা পায় না। এমনকি সাপগুলো পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। এ জালে যা আটকায়, তা কোনো প্রকারেই বের হতে পারে না। এভাবেই দেশিয় মৎস্যস্থল নিধন করা হচ্ছে তদুপরি জলসেচন দ্বারা মৎস্য ডিমগুলোও ধ্বংস করা হচ্ছে।
এখন দেশিয় মৎস্যকুলের বিকল্প হিসেবে স্থান পেয়েছে বেশ কিছু বৈদেশিক মাছ। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সিলভার কার্প, তেলাপিয়া, কার্পু, আফ্রিকান মাগুর ইত্যাদি। সবিশেষ উল্লেখ্য, এসব মৎস্য খননকৃত গভীর পুকুরে সর্বত্র পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতিপালন করা হচ্ছে। সাস্প্রতিক মৎস্য বিভাগ এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। বর্তমানে মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের যতোরকম প্রচেষ্টা নেয়া হোক না কেনো, মৎস্য বাসোপযোগী পরিবেশে অর্থাৎ পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে না পারলে মৎস্য উন্নয়ন কোনো রকমেই সম্ভব নয়। তাই খাল, বিল, পুকুর, ডোবাগুলো সুগভীর খননের মাধ্যমে মিঠা পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করতে হবে। কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারেন্ট জাল সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করতে হবে। মৎস্য আইনের ধারগুলো নিশ্চিতভাবে অনুসরণ করতে হবে। সর্বোপরি জনসংখ্যা বিস্ফোরণের প্রতি লক্ষ্য রেখে মৎস্য প্রজনন বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজন সাময়িক মৎস্য নিধন স্থগিত রাখতে গণসচেনতনতা বৃদ্ধি অটুট রাখতে হবে।
মৎস্য অতি উপাদেয় খাদ্য ও প্রচুর আমিষে পরিপূর্ণ। এ প্রোটিন সমৃদ্ধ মৎস্য নিয়মিত আহারে দেহের পুষ্টি সাধন হয়। মৎস্য উৎপাদনের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারলে পুষ্টির অভাব পূরণ হবে এবং রপ্তানি বৃৃদ্ধির মাধ্যমে বহু মূল্য বৈদিশিক মুদ্রা আহরণে দেশ ও দশের প্রভূত উপকার হবে। অতএব, গোটা পরিবেশ গণসচেতনতার মাধ্যমে মৎস্য উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। সরকারি উদ্যোগে খাল, বিল, হাওর-বাওরে মৎস্য পোনা চাষ করতে হবে। শুধু চাষ করলেই হবে না, বরং এর যথোপযুক্ত সংরক্ষণ ও তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রয়োগে মৎস্য সম্পদ রক্ষা করে দেশিয় সমৃদ্ধি সাধন করতে হবে।
ফজর | ৪:৫৮ |
যোহর | ১১:৪৫ |
আসর | ৩:৩৬ |
মাগরিব | ৫:১৫ |
এশা | ৬:৩১ |
হেরার আলো
|
বাণী চিরন্তন
|
আল-হাদিস
|
২৫-সূরা ফুরকান সুন্দর জিনিস চিরকালের আনন্দ। নামাজে তোমাদের কাতার সোজা কর, নচেৎ আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতভেদ ঢালিয়া দিবেন। |
করোনা পরিস্থিতি | ||
বাংলাদেশ | বিশ্ব | |
আক্রান্ত | ৭,৫১,৬৫৯ | ১৬,৮০,১৩,৪১৫ |
সুস্থ | ৭,৩২,৮১০ | ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮ |
মৃত্যু | ১২,৪৪১ | ৩৪,৮৮,২৩৭ |
দেশ | ২০০ ২১৩ | |
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। |
হ্যাঁ | না | মতামত নেই |