* গম দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। বন্যাজনিত খাদ্যভাব মিটাতে গম চাষ করুন।
* গম চাষ লাভজনক। এতে সেচের খরচ কম, এমনকি বর্তমানে বিনা সেচেও গম আবাদ করা যায়।
* বন্যা পরবর্তীতে স্বল্পচাষে অথবা বিনাচাষেও গম আবাদ করা হয়ে থাকে।
* প্রতি ১০ কেজি ধান থেকে বড়জোর ৭ কেজি চাল পাওয়া যায়। অথচ ১০ কেজি গম থেকে প্রায় ১০ কেজি আটা পাওয়া যায়।
* গম ফসলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম হয়।
* গম-রুটি ভাতের চেয়ে পুষ্টিকর।
গমের অধিক ফলন পাওয়ার উপায়
* বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে কার্তিকের শেষ সপ্তাহ হতে অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
* দেশের উওরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় এখানে অগ্রহায়ণের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত গম বীজ বোনা যায়।
* ১৫ অগ্রহায়ণের পর গম বীজ বোনা হলে প্রতি একদিন দেরির জন্যে হেক্টর প্রতি প্রায় ৪০-৫০ কেজি (বিঘায় ৬-৭ কেজি) ফলন কমতে থাকে।
উপযুক্ত মাটিতে গম চাষ
* পলিযুক্ত দো-অাঁশ, বেলে দো-অাঁশ ও এঁটেল দো-অাঁশ মাটি গম চাষের জন্যে উওম।
উন্নত জাত নির্বাচন
* আগাম বপনের ক্ষেত্রে আনন্দ, বরকত, কাঞ্চন, আকবর, প্রতিভা ও সৌরভ জাত বপন করা ভালো।
* ধান কাটা ও জমি তৈরির জন্যে দেরি হলে কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রাণী, প্রতিভা ও গৌরব জাত বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
ভালো বীজ ব্যবহার
* ভালো বীজ মানে ভালো ফসল।
* অপুষ্ট ও পোকা/রোগাক্রান্ত বীজ ব্যবহার না করে পুষ্ট বীজ বেশি ফলনের জন্যে ব্যবহার করতে হয়।
* শতকরা ৮৫ ভাগের ওপরে গজানোর ক্ষমতা আছে এমন বীজ ব্যবহার করা প্রয়োজন।
পরিমাণমত বীজ ব্যবহার
* ভালো ফলন পেতে হলে সেচসহ অথবা সেচ ছাড়া হেক্টরপ্রতি ১২০ কেজি (বিঘায় ১৬ কেজি) বীজ ব্যবহার করতে হবে।
* বীজ গজানোর ক্ষমতা শতকরা ৮৫ ভাগের কম হলে প্রতি ১ ভাগ গজানোর ক্ষমতা কম হওয়ার জন্যে হেক্টরপ্রতি ১ কেজি (বিঘায় ১৩০ গ্রাম) করে বীজের হার বাড়াতে হবে।
* গজানোর ক্ষমতা শতকরা ৫৫ ভাগের নিচে হলে ঐ গম বীজ হিসেবে বপন করা উচিত নয়।
বীজ শোধন
* বীজ বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজ ৩ গ্রাম ভিটাভেঙ্ দ্বারা টিনের পাত্রে নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
সঠিক পদ্ধতিতে বীজ বপন
* সারিতে অথবা ছিটিয়ে গম বীজ বপন করা যায়। সারিতে বুনলে জমি তৈরির পর লাঙ্গল দিয়ে আনুমানিক ২০ সেঃ মিঃ (৮ ইঞ্চি) দূরে দূরে ও ৪-৫ সেঃ মেঃ গভীরে গম বীজ বোনা ভাল। তারপর আড়াআড়ি হালকা মই দিয়ে সারিগুলো ভালোভাবে ঢেকে দিতে হবে।
* বপনের পর জমিতে যথেষ্ট রস না থাকলে বীজ ভালোভাবে গজানোর জন্যে একাটি হালকা সেচ দেয়া দরকার।
সুষম সার প্রয়োগ
সেচসহ ও সার ছাড়া সারের পরিমাণ (কেজি)
সূত্র : কৃষি প্রযুক্তি হাতবই
সার ব্যবহারের নিয়ম
* সেচসহ চাষের ক্ষেত্রে নির্ধারিত ইউরিয়া সারের দুই-তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সম্পূর্ণ অংশ শেষ চাষের পূর্বে প্রয়োগ করে মই দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
* সেচ ছাড়া চাষের ক্ষেত্রে ইউরিয়াসহ সব রকম সার শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
* তবে চারা অবস্থায় বৃষ্টি হলে হেক্টরপ্রতি ৪০ কেজি (বিঘায় ৫.৫ কেজি) ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
* রাসায়নিক সারের পাশাপাশি হেক্টরপ্রতি ৭-১০ টন (বিঘায় প্রয় ১.০-১.৫ টন) গোবর/কম্পোস্ট সার জমি চাষের সময় প্রয়োগ করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায় এবং মটির গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়।
বন্যা পরবর্তী গম চাষ প্রযুক্তি
* স্বাভাবিক চাষ ছাড়া বিনা চাষেও গম আবাদ করা সম্ভব। জমি থেকে বন্যার পানি সরে গেলে যথেষ্ট রস থাকা ক্ষেতের ওপর দিয়ে হাঁটলে পায়ের দাগ পড়ে এমন অবস্থায় বিনা চাষে গম ছিটিয়ে বুনতে হয়। বীজের পরিমাণ হবে স্বাভাবিক চাষের মত।
* পাখির হাত থেকে গম বীজ রক্ষার জন্যে বোনার আগে ঘন ও কাঁচা গোবর গোলা পানিতে বীজ ৬-১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখার পর সকালে বাতাসে শুকিয়ে ঝরঝরে করে নিতে হবে। এভাবে বীজ বুনলে বীজ তাড়াতাড়ি গজায়।
* বীজ বোনার আগে অনুমোদিত হারে সমস্ত সার এবং ইউরিয়া সারের দুই তৃতীয়াংশ জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে।
* বীজ ও সার একই সময়ে ছিটানো চলে অথবা গম বোনার ১৭-২১ দিন পর জমিতে প্রথম হালকা সেচের আগে বা পরে অনুমোদিত হারে ইউরিয়া সার ছিটালে গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয়ে থাকে।
* দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেচ যথাক্রমে শীষ বের হবার সময় এবং দানা বাধার সময় দিলে ফলন খুব বাড়ে।
স্বল্প চাষে গম আবাদ
* দেশী লাঙ্গল দিয়ে দুটি চাষ দিয়েই গম আবাদ করা যায়। এক্ষেত্রে ধান কাটার পর জমিতে জো আসার সাথে সাথে ছোট লাঙ্গলে চাষ দিতে হয়।
* যদি জো না থাকে তবে একটি হলকা সেচ দিয়ে জো আসার পর চাষ দিতে হয়। প্রথম চাষ দিয়ে মই দিতে হবে।
* আড়াআড়িভাবে দ্বিতীয় চাষ দেবার পর ও অনুমোদিত সব সার প্রয়োগের পর বীজ ছিটিয়ে মই দিতে হয় অথবা দ্বিতীয় চাষের সময় লাঙ্গলের পিছনে পিছনে সারিতে বীজ বুনে মই দিতে হয়। উল্লেখ্য যে, পাওয়ার টিলার ব্যবহার করলে একচাষেই গম বীজ বোনা সম্ভব।
* বীজের পরিমাণ হবে স্বাভাবিক চাষের মত।
* সেচের সুবিধা থাকলে বীজ বপনের ১৭-২১ দিনের মধ্যে প্রথম সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচের সময় বাকি এক-তৃতীয়ংশ ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
সেচ প্রয়োগ
* মাটির প্রকারভেদে সাধারণত ২-৩টি সেচের প্রয়োজন হয়। চারার তিন পাতার সময় অর্থাৎ চারার ১৭-২১ দিন হলে প্রথম সেচ দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
* দ্বিতীয় সেচটি গমের শীষ বের হওয়ার সময় (বয়স যখন ৫৫-৬০ দিন ) এবং তৃতীয় সেচ দানা গঠনের সময় (বয়স যখন ৭৫-৮০ দিন) প্রয়োগ করলে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যায়।
অন্যান্য পরিচর্যা
* সেচের পর জমিতে জো আসলে মাটির ওপরের আস্তর ভেঙ্গে দিতে হবে।
আগাছা দমন
* প্রথম সেচের পর (চারার বয়স যখন ২৫-৩০ দিন) জমিতে আগাছা দমনের জন্য নিড়ানির ব্যবস্থা নিতে হবে।
* এ সময় আগাছা দমন করলে শতকরা প্রয় ১২ ভাগ ফলন বৃদ্ধি পায়।
ইঁদুর দমন
* ইদুর গম ফসলের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে।
* ইঁদুরের আক্রমণ হলে ফাঁদ পেতে বা বিষটোপ দিয়ে ইঁদুর দমন করতে হবে। ফসটঙ্নি ট্যাবলেট দিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করে রাখলে ইঁদুর মারা যেতে পারে।
ফসল কর্তন
* ফসল ভালো পেতে হলে সময়মত গম কাটা দরকার। দানাগুলো পেকে পুরোপুরি হলদে হয়ে যখন গাছ মরে তখন বুঝতে হবে গম কাটার উপযুক্ত সময় হয়েছে।
* গমের দানা মুখে নিয়ে দাঁতে চিবুলে যদি কট্কট্ করে শব্দ হয়, তাহলে বোঝা যাবে গম কাটার সময় হয়েছে।
বীজ সংরক্ষণ
* কৃষক পর্যায়ে উন্নত পদ্ধতিতে গম বীজ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে উন্নতমানের বীজের অভাবে গম চাষ ব্যাহত না হয়।
* গম মাড়াই করার পর ২-৩ বার রোদে শুকাতে হবে যাতে বীজর আদ্রতা শতকরা ১২ ভাগের কম থাকে। দাঁতে গম চিবালে কট্ করে শব্দ হলে বুঝতে হবে যে আদ্রতা শতকরা ১২ ভাগের নিচে এবং এ বীজ সংরক্ষণের উপযুক্ত। বীজ শুকানোর পর ঠা-া হলে পাত্রে ভরে রাখাতে হবে।
* কেরোসিন/ বিস্কুটের টিন বা ড্রামে বীজ সংরক্ষণের করা সবচেয়ে উত্তম। পাত্র অবশ্যই ছিদ্রমুক্ত হতে হবে এবং ঢাকনাও শক্তভাবে আটকানো থকতে হবে।
*এ ছাড়াও পলিথিন ব্যাগ কিংবা মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করা যায়। ছিদ্রমুক্ত মোটা পলিথিন ব্যাগে বীজ ভরে শক্ত করে বীজ বরাবর মুখ বেঁধে রাখতে হবে।
* কলসি বা মটকায় বীজ রাখলে এর বাইরে আলকাতরার প্রলেপ দিয়ে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। এতে পাত্রের সুক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে বাইরের বাতাস ভিতরে ঢুকতে পারে না।
ফজর | ৪:৫৮ |
যোহর | ১১:৪৫ |
আসর | ৩:৩৬ |
মাগরিব | ৫:১৫ |
এশা | ৬:৩১ |
হেরার আলো
|
বাণী চিরন্তন
|
আল-হাদিস
|
২১-সূরা : আম্বিয়া যে ঋণী সে কৃতজ্ঞ নহে। পবিত্র হওয়াই ধর্মের অর্থ। |
করোনা পরিস্থিতি | ||
বাংলাদেশ | বিশ্ব | |
আক্রান্ত | ৭,৫১,৬৫৯ | ১৬,৮০,১৩,৪১৫ |
সুস্থ | ৭,৩২,৮১০ | ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮ |
মৃত্যু | ১২,৪৪১ | ৩৪,৮৮,২৩৭ |
দেশ | ২০০ ২১৩ | |
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। |
হ্যাঁ | না | মতামত নেই |