শস্যক্ষেত উর্বর হলো, পুরুষ চালাল হাল/নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল/নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে/ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে! কৃষিতে নারীর অবদানের এমন স্বীকৃতি অনেক আগেই দিয়েছেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। অথচ এতকাল পরেও রাষ্ট্রীয়ভাবে কাজের স্বীকৃতি মেলেনি কৃষিতে নারীর অবদানের। এমনকী, কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরে পুরুষ কৃষকের জন্য সুনির্দিষ্ট ডাটাবেজ থাকলেও নারী কৃষকের ডাটাবেজ নেই। নারীরা মজুরী পান পুরুষের অর্ধেক। অথচ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সমীক্ষায় বলেছে, নারীর শ্রম শক্তির মধ্যে ৬৮ শতাংশই কৃষি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সঙ্গে জড়িত।
বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী কর্মজীবী নারীরা অর্ধেকের বেশি কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। দেশে কৃষি খাতে নিয়োজিত নারীর সংখ্যা ৯০ লাখ ১১ হাজার। নারীরা ফসল উৎপাদনে মাঠে যেমন কাজ করেন, তেমনি মাঠের বাইরের উৎপাদন কাজেও বড় ভূমিকা রাখেন। অথচ জমিতেও নারীর মালিকানা কমছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের ওয়েবসাইটের কৃষিতে নারী শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জমির মালিকানা পুরুষের ৮১ শতাংশ, নারীর ১৯ শতাংশ। ওই প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে এত ভূমিকা রাখার পরও ৪৬ শতাংশ নারীর স্বাস্থ্যসেবা নেয়ার জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হয়। এখনও কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে ছয় শতাংশ নারী স্বামীর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তাদের কাজের অবদানও স্বীকৃতি পায় না।
শুধু কৃষি নয়, নারীর কর্মক্ষেত্রকে অর্থনীতির মূলধারার বাইরে রেখে বিবেচনা করার পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে মোট দেশজ উৎপাদনে (জেডিপি) নারীর অবদান এখনও ২০ শতাংশ মাত্র। রান্নাবান্না, শিশু পরিচর্যাসহ গৃহস্থালির কোনো কাজেরই অর্থনৈতিক মূল্য নেই। পুরুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি সময় ধরে গৃহস্থালির কাজ করেন নারীরা। তবুও এ কাজের মূল্যায়ন নেই। ২০১৪ সালে প্রকাশিত বিবিএসের সময় ব্যবহার জরিপে দেখা গেছে, কর্মজীবী একজন পুরুষ ২৪ ঘন্টার মধ্যে অর্থের বিনিময়ে ছয় ঘন্টা ৫৪ মিনিট কাজ করেন। অর্থের বিনিময়ে নারীর কাজের সময় ৫ ঘন্টা ১২ মিনিট। তবে একজন কর্মজীবী নারী বাসায় ফিরে দৈনিক গড়ে তিন ঘণ্টা ৩৬ মিনিট গৃহস্থালীর কাজ করেন। পুরুষেরা ঘরের কাজে গড়ে মাত্র এক ঘন্টা ২৪ মিনিট সময় ব্যয় করেন। তবে রান্নাবান্না, সন্তান লালন-পালনসহ গৃহস্থালীর কাজকর্মের স্বীকৃতি নেই মোট জিডিপিতে। এই শ্রমের আর্থিক মূল্যমানও নির্ধারণ করা হয় না। এর ফলে অর্থনীতিতে নারীর এ কাজের অবদান আড়ালেই থাকছে। বাংলাদেশে এক কোটি ছয় লাখ লোক গৃহস্থালি কাজ করেন। তাদের সিংহভগই নারী।
পাঁচ থেকে ছয় কোটি নারী বিভিন্ন ধরনের কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। তবে তাদের অর্থনৈতিক অবদানের মূল্যায়ন বা স্বীকৃতি তারা পাচ্ছেন না। এ প্রেক্ষাপটে গত ১৫ অক্টোবর শনিবার পালিত হলো আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিভিন্ন সংগঠন। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
গ্রামীণ জীবনযাত্রায় স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচার অভিযানের ২০১২ সালের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দেশে মোট নারী শ্রমশক্তি এক কোটি ৫২ লাখ। এর মধ্যে ৭৭ শতাংশ গ্রামীণ নারী। যার ৬৮ শতাংশ কৃষি, পোলট্টি, বনায়ন ও মৎস্য খাতের সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের ২০০৮ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কৃষি খাতে নিয়োজিত পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান শতকরা ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া কর্মক্ষম নারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োজিত আছে কৃষিকাজে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা অনুষদের উন্নয়ন ও দারিদ্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুল হক কাজলও কৃষিতে নারীর ভূমিকা বাড়ছে বলে জানান। তিনি বলেন, ফসল লাগানো এবং কেটে ঘরে তুলে আনা ছাড়া কৃষি খাতের সব কাজই নারীরা করে থাকেন। ফসলের প্রাক-বপন প্রক্রিয়ার শুরু বীজ সংরক্ষণ এবং পরে আবার ফসল উত্তোলনের পর সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণেও নারীরাই মূখ্য ভূমিকা রাখছেন। বলা চলে কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে নারী। তবে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যানে নারীর এ ভূমিকার স্বীকৃতি নেই বললেই চলে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, গ্রামীণ নারীরা রান্নাবান্না-সন্তান লালান পালন এবং পরিবারের অন্যসব কাজ করার পরও কৃষিকাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মহিলা পরিষদ গ্রামীণ নারীদের নিয়ে গবেষণা করে দেখেছে, গ্রামীণ নারীরা সর্বক্ষেত্রই অধিকার বঞ্চিত। নারীরা বঞ্চিত হওয়ার কাহিনী বহু পুরনো। নারী অধিকার রক্ষায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। তিনি আরো বলেন, নানা কৌশলে প্রতিনিয়ত ঠকানো হচ্ছে তাদের। আবার নরীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনও নন। দেশের গ্রামীণ নারী শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং কৃষি তথ্য পেঁৗছে দেয়ার বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।
ফজর | ৪:৫৮ |
যোহর | ১১:৪৫ |
আসর | ৩:৩৬ |
মাগরিব | ৫:১৫ |
এশা | ৬:৩১ |
হেরার আলো
|
বাণী চিরন্তন
|
আল-হাদিস
|
২৬-সূরা শু’আরা’
পরিশ্রমী লোকের নিকট সবচেয়ে সুখপ্রদ জিনিস হচ্ছে ঘুম। ধর্মার্থে প্রাণ উৎসর্গকারী শহীদের রক্ত অপেক্ষা বিদ্বান ব্যক্তির কলমের কালি অধিক পবিত্র। |
করোনা পরিস্থিতি | ||
বাংলাদেশ | বিশ্ব | |
আক্রান্ত | ৭,৫১,৬৫৯ | ১৬,৮০,১৩,৪১৫ |
সুস্থ | ৭,৩২,৮১০ | ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮ |
মৃত্যু | ১২,৪৪১ | ৩৪,৮৮,২৩৭ |
দেশ | ২০০ ২১৩ | |
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। |
হ্যাঁ | না | মতামত নেই |