চাঁদপুরের শাহারাস্তি উপজেলার দক্ষিণ সূচীপাড়া ইউনিয়নের রাগৈ গ্রামে সরদার বহুমুখি ফার্ম লিমিটেড। ফার্মের স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নন কমিশনার (অবঃ) আব্দুল মতিন সরদার। তিনি চাকুরিতে থাকাকালে স্বপ্ন দেখেন একটি বড়ি একটি খামারের। পরবর্তীতে ৪ একর জমিতে বহুমুখী ফার্ম প্রতিষ্ঠিত করেন। সেখানে রয়েছে ১ একর জুড়ে ১টি পুকুর। ১৫ হাজার মুরগির খামার। উন্নত জাতের কবুতর। এছাড়া ফল ও ফলাদি গাছ। বর্তমানে নিজ উদ্যোগে বায়োগ্যাসের বিদ্যুৎ দিয়ে জ্বলছে ২০টি পরিবারের আলো। যেখানে ৫০ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে চলছে সরদার বহুমুখি ফার্মের সাফল্য। আব্দুল মতিন সরদারের সাথে তার বিভিন্ন ভাবনা, সাফল্য, সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে কথা হয় কৃষি কণ্ঠের বিভাগীয় সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুর রহমান গাজী। সাক্ষাৎকারটি আজ প্রকাশিত হলো।
তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে পশু-মোটা তাজাকরণ ফার্ম শুরু করি। পরে জমির পরিধি বাড়িয়ে বর্তমানে ৪একর জমি। এর মধ্যে অল্প কিছু মানুষের কাছ থেকে লিজ নিয়েছি। আমার ছাত্র জীবন থেকেই শখ ছিলো নিজ এলাকায় একটি বাড়ি, একটি খামার করার। আল্লাহ পাক আমাকে সে সুযোগটি দান করেছে। মহান আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া। সাফল্যের দিক আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন আমার কর্ম জীবনের সব আয় এখানে ব্যয় করেছি। এখন এ ফার্মের আয় দিয়ে আমি ও আমার ১৩ জন কর্মচারীর জীবন চলে। বর্তমানে খামারে ১৫ হাজার লেয়ার মুরগি আছে। গত ডিসেম্বর মাসে ২ লাখ ৩০ হাজার ডিম বাজারে বিক্রি করছি। আমার এ ফার্মে যুব উন্নয়নের মাধ্যমে ৩০ জন বেকার যুবকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে আমাদের সূচীপাড়া ইউনিয়নে ক্ষুদে ৬০ জন খামারী আছে। সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা পেলে আমাদের রাগৈ গ্রামে সব পরিবারে বায়োগ্যাসের বিদ্যুৎ পৌঁছানো যেতো। আমার লেয়ার খামারের মুরগির বিষ্ঠা থেকে জ্বালানি গ্যাস তৈরি হচ্ছে। এ বিদ্যুৎ থেকে এ গ্রামের ২০টি পরিবারে আলো জ্বলছে। এতে ৭০/৮০ ভাগ জ্বালানি গ্যাস তৈরি হয়ে অবশিষ্ট অংশ উন্নতমানের জৈব সারও তৈরি হয়। আর এই বায়োগ্যাস দিয়ে জেনারেটরের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ৫০ হাজার কিলোওয়াট। যা দিয়ে প্রতিটি ঘরে ও দোকানে বাতি, ফ্যান, ফ্রিজ ও টেলিভিশনসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি চালানো হয়। তিনি এ প্রতিনিধিকে আরো জানান, আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আমি চাঁদপুর জেলার মানুষের মাংশের চাহিদা ও ডিমের চাহিদা পূরণ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। কোনো ব্যাংক যদি সুদের হার কমিয়ে আমাকে আর্থিক সহযোগিতা করে তাহলে আমি বৃহৎ আকারে একটি ডেইরী ফার্ম করবো।
শাহরাস্তি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার দুলাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, আব্দুল মতিন সরদার একজন সফল ও পরিশ্রমী খামারি। নিজের চেষ্টায় অল্প সময়েই গড়ে তুলেছেন বহুমুখী খামারটি। তার চিন্তিত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুযোগ সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের, তেমনি মিটবে প্রোটিন ও আমিষের চাহিদা। দুলাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, পরিশ্রমে সবই সম্ভব। আমার মনে হয় তিনি চাঁদপুরের সফল খামারি। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ ফার্ম এক দৃষ্টান্ত। এজন্য তিনি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন।