চাঁদপুর, রোববার, ২০ জুন ২০২১, ৬ আষাঢ় ১৪২৮, ৮ জিলকদ ১৪৪২
jibon dip

সর্বশেষ খবর :

  • -
প্রয়াত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন
একজন সাদা মনের দয়ালু মানুষ ছিলেন
মিজানুর রহমান রানা
২০ জুন, ২০২১ ০০:০০:০০
প্রিন্টঅ-অ+


 



সময়টা ২০০৮ সাল সম্ভবত। আমি তখন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের একজন হিতাকাঙ্ক্ষী ছিলাম। একদিন হঠাৎ করে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত সাহেবের ফোন পেলাম। তিনি বললেন, একটু অফিসে যেতে। আমি গিয়ে দেখলাম, আমার পূর্ব পরিচিত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন সাহেব জনাব কাজী শাহাদাত সাহেবের অফিসে বসে আছেন। সালাম বিনিময়ের পর কাজী সাহেব জানালেন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন সাহেব চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংক্রান্ত লেখা লেখবেন। তাঁর লেখাগুলো আমি কম্পোজ করে দিতে পারবো কি-না। তাঁদের সহৃদয়তায় আমি বেশ খুশি মনেই রাজি হলাম।



সেই যে শুরু প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন সাহেবের সাহচর্য, এরপর তিনি প্রায়ই আসতেন আমার ছোট্ট কম্পিউটার সেন্টারে। পরবর্তীতে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক মির্জা জাকির ভাইয়ের সদয় সহায়তায় ব্যাংকার সামীম আহমেদ সাহেবের সাথে সাংগঠনিক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি এবং বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদের সাহিত্য ও গবেষণা সম্পাদক, পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হই।



বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদের প্রথম কমিটিতে সভাপতি ছিলেন চাঁদপুরের একজন সুলেখক, গীতিকার জনাব মুখেলেসুর রহমান মুকল ভাই। পরবর্তীতে সভাপতি হিসেবে প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন সাহেব মনোনীত হন। প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সামীম আহমেদ। ওই সময় বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদের একটি ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচনের জন্যে আমরা তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির ইস্কাটনের বাসায় যাই। কত স্মৃতি কথা।



সেখানে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনির বাসায় দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু প্রথমেই আমাদের ডাক পড়লো। প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, সামীম আহমেদ, আমি মিজানুর রহমান রানা, দেওয়ান মাসুদ রহমান, ফখরুল আলম অপুসহ সংগঠনের ক'জন সদস্য গিয়েছিলাম। আমাদের দেখে ডাঃ দীপু মনি আপার সহাস্য কণ্ঠস্বর। সেই প্রথম আমি ওনার সান্নিধ্যে যাই। আমি মোড়ক উন্মোচনের ছবি তুলতে গেলে আপা বাধা দিয়ে তাঁর পিএসকে ছবি তুলতে বলেন। আমাকে বললেন, 'এত কষ্ট করে এসেছেন, আপনি ছবির পেছনে থাকবেন কেন?' পরবর্তীতে ছবি তোলার পর আপা বললেন, 'আমি মহাকাল স্মরণিকাটি অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে পৌছে দেবো।'



 



ওনার কাছ থেকে অতিথি সেবায় খুশি মনে বের হয়ে আমাদের গাড়ি চললো চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন সাহেব আমাদেরকে সেদিন কত আপ্যায়ন করেছিলেন সেটা আজ আমার হৃদয়ে স্মৃতি হয়ে জড়িয়ে আছে।



এরপর আরো অনেক কিছু ঘটনা। একদিন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন আমাকে বললেন, রানা তুমি চাইলে চাঁদপুর কণ্ঠের সাহিত্য পাতায় যোগদান করতে পারো। কারণ ওই সময় সাহিত্য পাতার বিভাগীয় সম্পাদক ক্ষুদীরাম দাস চাকুরি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন রাজবাড়ি। তাই তিনি আমাকে আহ্বান করেছিলেন। আমি বললাম, স্যার, আমি কি এটা পারবো? তিনি বললেন, আমি তো আছি। তুমি পারবে। তিনি তাৎক্ষণিক জনাব কাজী শাহাদাত সাহেবের কাছে ফোন দিলেন। কাজী সাহেব বললেন, তিনি চাঁদপুরের বাইরে আছেন। ফিরে এসে জানাবেন। ক'দিন পর ফিরে এসেই আমাকে ফোন দিলেন। ডেকে নিলেন এবং বললেন, প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বললেন, 'আপনি সাহিত্য পাতার বিভাগীয় দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন। আপনি কি রাজি আছেন?' আমি বললাম, 'জ্বি, আপনারা যদি পাশে থাকেন, তাহলে অবশ্যই নিবো।'



দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের সাহিত্য পাতায় বিভাগীয় সম্পাদক হিসেবে কাজ শুরু করলাম। সে কী কাজের আগ্রহ-উন্মাদনা। এটা ছিলো আমার জীবনের একটা মাইলফলক। এরপর একে একে পাঠক ফোরাম, প্রবাসী কণ্ঠের বিভাগীয় দায়িত্ব পেলাম। কাজ করতাম, অনুসরণ করতাম ঠিক কাজী শাহাদাত সাহেবকেই। তাঁর কর্তব্যনিষ্ঠা আমাকে অনুপ্রাণিত করতো। বলা যায়, আমি আমার জীবনকে সঠিকভাবে চালনার জন্যে জনাব কাজী শাহাদাত সাহেবের মতো একজন যোগ্য, অভিজ্ঞ মানুষের সানি্নধ্যে পৌছেছিলাম। তবে এর পেছনে ছিলো প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন সাহেবের অবদান। কাজী শাহাদাত সাহেব আমাকে সম্পাদনার মতো বিশাল কাজটি যত্ন সহকারে শিখিয়েছিলেন। যদি তা না হতো তাহলে আমি আজকের অবস্থানে আসতে পারতাম কি না তা অত্যন্ত সন্দেহের বিষয় ছিলো। তিনি আমার জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। সেজন্যে আমার মনে-ধ্যানে সব সময় কাজী শাহাদাত সাহেবের প্রতি মায়া-মমতা ও শ্রদ্ধাবোধ জেগে থাকে। আমি চেষ্টা করেও তা মুছতে পারিনি।



একদিন কাজী সাহেব আমাকে অফিসে যেতে বললেন। একটি বই হাতে দিলেন। এরপর বললেন, ফরিদগঞ্জের একজন মুক্তিযোদ্ধার জীবনী পড়ে বিস্তারিত জেনে একটি নিউজ করতে। এবং আমার পিঠে চাপড় দিয়ে সহাস্যে বললেন, এখন থেকে আপনি সাংবাদিক। ওই লেখাটা লিখে মেইল করার পরদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রকাশ হলো। আমার কী যে আনন্দ!



 



আমি আজ সব সময় এই দুজন মানুষকে স্মরণ করি। একজন জনাব কাজী শাহাদাত সাহেব, আর অন্যজন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন। কাজী সাহেবের কাছ থেকে আমি জীবন চলার পথে যা পেয়েছি, তা কোটি টাকা দিলেও শোধ হবার নয়। আর প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন আমাকে যে স্নেহ-মায়া-মমতা বিলি করতেন তা ছিলো পিতৃতুল্য। কিন্তু এই মানুষটি গত বছরের ১৫ জুন মৃত্যুবরণের খবরে আমি খুব কেঁদেছিলাম। আমার কলিজাটা ফেটে কষ্টে রক্তক্ষরণ হয়েছিলো। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।



আর একদিনের ঘটনা। প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন সাহেব আমার কম্পিউটার সেন্টারে। তাঁর কাজই করছিলাম। হঠাৎ আমার স্ত্রীর ফোন। উদ্বিগ্নতার সাথে জানালো, তার প্রসব ব্যথা শুরু হয়েছে। আমি শোনা মাত্রই আমার পাশে বসা প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন সাহেবকে বিষয়টি জানালাম। তিনি বললেন, আজ আর কাজ করার দরকার নেই। তুমি যাও, তোমার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে যাও। তিনি যাবার সময় আমাকে বেশ কিছু টাকা দিয়েছিলেন। বলাবাহুল্য ওই টাকাটা আমার তাৎক্ষণিক বেশ কাজে লেগেছিলো।



আরেকদিনের ঘটনা। রাত প্রায় দশটায় ফোন করে জিজ্ঞাসা করলেন, রানা তোমার ক্যামেরা আছে? আমি বললাম, জ্বি স্যার, আছে। বললেন, পরদিন দৈনিক আমাদের কুমিল্লার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাসহ নদীপথে ভ্রমণের দাওয়াত আছে। ওই দাওয়াতে গিয়ে আমি বেশ ক'জন গুণী মানুষের সানি্নধ্য পেয়েছিলাম, যা আজও আমি স্মরণ করি।



প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন ছিলেন সত্যিকার অর্থে একজন প্রতিবাদী, সরল এবং জ্ঞানী মানুষ। তাঁর কবিতাগুলো আমাকে অনুপ্রেরণা দিতো। তিনি চাঁদপুরের যতো ঐতিহাসিক স্থাপনা ছিলো ওইগুলো নিয়ে লিখতেন। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও সাবলীল ভাষায় লিখলেন। তার লেখা পড়েই আমি চাঁদপুরের মোলহেড বধ্যভূমিসহ বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত কাহিনী জানতে পারি। যা আজও আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।



'ধূসর ধূলির আড়ালে' এসব কথা মাঝে মাঝে মন-মাজারে ভেসে ওঠে। তখন তাঁকে নাইবা পাই, কাজী সাহেবকে ফোন দেই। সালাম জানাই। খোঁজ-খবর নেই। কারণ আমি যেখানেই থাকি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ আমার হৃদ-মাজারের হৃদয় সিংহাসনে দোলা দেয়, স্মৃতি জাগিয়ে দেয়। আর প্রয়াত প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনের কথা মনে পড়লে কান্নায় সিক্ত হয় দু'নয়ন।



 



 


হেরার আলো
বাণী চিরন্তন
আল-হাদিস

২-সূরা বাকারা


২৮৬ আয়াত, ৪০ রুকু, মাদানী


পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।


৭৯। সুতরাং দুর্ভোগ তাহাদের জন্য যাহারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং তুচ্ছ মূল্য প্রাপ্তির জন্য বলে, 'ইহা আল্লাহর নিকট হইতে।' তাহাদের হাত যাহা রচনা করিয়াছে তাহার জন্য শাস্তি তাহাদের এবং যাহা তাহারা উপার্জন করে তাহার জন্য শাস্তি তাহাদের।


 


 


 


আত্মার সৌন্দর্য মানুষকে পরিপূর্ণতা দান করে। _টমাস ফুলার।


 


 


যে ব্যক্তি প্রথম সালাম দেয়, সে অহঙ্কার মুক্ত।


 


 


ফটো গ্যালারি
করোনা পরিস্থিতি
বাংলাদেশ বিশ্ব
আক্রান্ত ৭,৫১,৬৫৯ ১৬,৮০,১৩,৪১৫
সুস্থ ৭,৩২,৮১০ ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮
মৃত্যু ১২,৪৪১ ৩৪,৮৮,২৩৭
দেশ ২০০ ২১৩
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
আজকের পাঠকসংখ্যা
২৯১২৭৭১৩
পুরোন সংখ্যা