কথায় আছে ‘বোকার ফসল পোকায় খায়’। বিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগে এসে সময় এবং যুগের চাহিদা মেটাতে আমাদের কৃষি উৎপাদনের কৌশলে আমূল পরিবর্তন এসেছে। এখন কৃষকেরা শুধু বার্ষিক খোরাকির জন্য ফসল উৎপাদন করেন না। কৃষিকে এখন মানুষ শিল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে। তাইতো ডিজিটাল যুগের/ই-কৃষি যুগের কৃষিতে সংযোজিত হয়েছে অনেক নতুন নতুন কৌশল। এক সময়ে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষকেরা পরিবেশের ক্ষতিকারক কীটনাশক নির্বিচারে ব্যবহার করতো। আইপিএম এবং মিডিয়ার বদৌলতে মানুষ এখন অনেক সচেতন। আইপিএম-এর ৫টি উপাদানের ৪র্থ উপাদান হচ্ছে যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসলের পোকা দমন।
যান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা :
*হাত জালের সাহায্যে পোকা ধরে মারা/সনাক্ত করা।
*আলোর ফাঁদ ব্যবহার।
*আক্রান্ত পাতার আগা কেটে দেয়া।
আমাদের আজকের মূল আলোচ্য বিষয় হচ্ছে আলোর ফাঁদ ব্যবহার :-
‘পিপীলিকার পাখা উঠে মরিবার তরে’। পোকা মাত্রই আলোর প্রতি আকৃষ্ট।
আলোর ফাঁদ কী ? (ডযধঃ রং ষরমযঃ ঃৎধঢ়?)
আলোক সংবেদনশীল পোকা আকৃষ্ট করার একটি উত্তম ও কার্যকরী পরিবেশ বান্ধব যান্ত্রিক কৌশল হচ্ছে আলোর ফাঁদ। আলোর ফাঁদ কেন স্থাপন করা হয় ?
আমরা যেমন আমাদের শরীরের রোগ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন রকম প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকি, আলোর ফাঁদ হচ্ছে ঠিক সেই রকমেরই একটি পরীক্ষা। যার মাধ্যমে আমাদের কৃষক ভাইয়েরা তার ফসলের জমিতে-
*উপকারী ও অপকারী পোকার উপস্থিতি/সংখ্যা জানতে পারে।
*আলোতে আকৃষ্ট করে পোকা মেরে ফেলার সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থা।
*প্রথম থেকেই ক্ষেতে পোকার দ্রুত বংশ বিস্তার কমিয়ে পোকার বসতি গড়তে না দেওয়া।
ফাঁদ স্থাপনের উপকরণ : বৈদ্যুতিক তার, বাল্ব, হারিকেন, হ্যাজাক, ফ্লোরোসেন্ট বাল্ব, চার্জার, তিনটি বাঁশের খুঁটি, পনির গামলা, ডিটারজেন্ট পাউডার/কেরোসিন।
ফাঁদ স্থাপনের কৌশল : ৩টি বাঁশের খুঁটির গোড়া ৩ দিকে পুঁতে দিয়ে উপরের মাথা একত্রে মাটি থেকে ২/৩ ফুট উপরে বেঁধে দিতে হবে। এবার খুঁটিদ্বয়ের উপরের সংযোগ স্থলে লাইটের নিচে একটি পাত্রে ডিটারজেন্ট/কেরোসিন মিশ্রিত পানি থাকবে।
স্থান : ফসলি জমি থেকে কিছু দূরে (১০০ থেকে ২০০ মিটার)।
সময় : সূর্যাস্তের আধা ঘণ্টা পর থেকে পরবর্তী দুই আড়াই ঘন্টা (সন্ধ্যার কালো কালিমা দূর না হওয়া পর্যন্ত)।
ফসলের স্তর : সর্বোচ্চ কুশি পর্যায়।
আকৃষ্ট/ ফাঁদে পতিত পোকা : উপকারী/অপকারী।
আলোর ফাঁদ বাস্তবায়নে সহযোগী ব্যক্তি/ দল/প্রতিষ্ঠান :
কৃষক, স্কীম ম্যানেজার, আইপিএম কৃষক মাঠ স্কুলের সদস্য, আইপিএম ক্লাবের সদস্য, আইসিএম ক্লাবের সদস্য, আইএফএমসিএফএফ, আইএফএমসিএফএফএস-এর সদস্য, আইএফএমসি কৃষক সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বা ক্লাব। সার্বিক ও কারিগরি সহযোগিতার জন্য উপ-সহকারী কৃষি অফিসার, উপজেলা কৃষি বিভাগ।
লক্ষ্যমাত্রা : উপজেলা পর্যায়ে প্রতি ব্লকে ১০ টি করে।
আলোর ফাঁদের উপকারিতা :-
*শুরুতেই পোকার দ্রুত বংশ বিস্তার কমিয়ে পোকার বসত গড়তে দেয় না।
*কীটনাশক ব্যবহার কমবে।
*উৎপাদন খরচ কম পড়বে।
*পরিবেশ দূষণ মুক্ত থাকবে।
“আলোর ফাঁদের ব্যবহার ধর,
ধানের ফলন বৃদ্ধি কর।”
“আইপিএম-এর সৈনিক মাঠে যায় দৈনিক,
সব পোকা শত্রু নয়, এ কথা আইপিএম কয়।”
লেখক : মুহাম্মদ আবদুল লতিফ ছিদ্দিকী, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি অফিস, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর। মুঠোফোন : ০১৭১৪৫০১০২৭