২০০৩ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমী থেকে ফরিদগঞ্জের মুফতি মাওঃ মুহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণ তাঁকে স্বাবলম্বী করে তুলেছে। তিনি তার কর্মকা- শুধু মসজিদের ইমামতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন নি। মৎস্য চাষ, কৃষি কাজ, গবাদী পশু পালন ইত্যাদির দ্বারা তিনি তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। ওই প্রশিক্ষণে মসজিদের ইমামগণকে সহীহ্- শুদ্ধরূপে কোরআন তেলাওয়াত, মাসয়ালা-মাসায়েল শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি, প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা তথা নিরাপদ মাতৃত্ব, মাতৃকল্যাণ ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা, বাল্যবিবাহ, যৌতুক ও তালাকের অপব্যবহার, বিজ্ঞানসম্মত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, আর্সেনিক দূষণের ভয়াবহতা, মাদকাসক্তি নিরোধ ও এইডস্ প্রতিরোধ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, প্রাথমিক চিকিৎসা তথা রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা, কৃষি ও বনায়ন তথা উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ, বনায়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণ, পশুপাখী পালন এবং মৎস্য চাষ সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ৪৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আর এ প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছেন মুফতি মাওঃ খোরশেদ আলম।
ইতিমধ্যে মুফতি মাওঃ মুহাম্মদ খোরশেদ আলম চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ ইমাম নির্বাচিত হয়ে জাতীয় পর্যায়ে ইয়েস কার্ড পেয়েছেন। বর্তমানে তিনি ইমামতির দায়িত্বের পাশাপাশি মৎস্য চাষ, হাঁস-মুরগি পালন, বনায়ন ও কৃষি কাজে করে যাচ্ছেন। তার এসব কর্মকা- দেখতে কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর, মৎস্য অফিস, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিগণ সরজমিনে গিয়েছেন।
মুফতি মাওঃ মুহাম্মদ খোরশেদ আলম ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের উত্তর গজারিয়া গ্রামের গণি ডাক্তার বাড়ির মরহুম মোঃ আমিন মাস্টার ও আতরেন্নেছা বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র। তারা ৩ বোন, ২ ভাই। খোরশেদ আলমের স্ত্রী আমেনা বেগম। তার বড় ছেলে মোঃ আশরাফুল আলম জুবায়ের (৮) ও ছোট ছেলে আফসারুল আলম জুনায়েদ (৪)।
তার বিভিন্ন ভাবনা ও স্বাবলম্বী জীবন নিয়ে কথা হয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের মাসিক আয়োজন 'কৃষিকণ্ঠে'র বিভাগীয় সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুর রহমান গাজীর সাথে। সাক্ষাৎকারটি আজ প্রকাশিত হলো।
কৃষিকণ্ঠ : কেমন আছেন?
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম : আলহামদুলি্লল্লাহ ভালো আছি।
কৃষিকণ্ঠ : কীভাবে ইমাম প্রশিক্ষণে সুযোগ পেলেন বা কেনো গেলেন এ ব্যাপারে কিছু বলুন।
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম : ২০০০ সালে কামিল (হাদিস) পাস করার পর আমাদের পার্শ্ববর্তী চরবড়ালী গ্রামের প-িত বাড়ি মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারলাম ইমাম প্রশিক্ষণে লোক নেয়া হবে। আমিও প্রশিক্ষণে যেতে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাঁদপুর ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে জমা দিলাম। তাদের নির্ধারিত সময়ে ইন্টারভিউতে আমি ফাস্ট হলাম অর্থাৎ প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্যে আমি মনোনীত হলাম। পরে মসজিদ থেকে ৪৫ দিনের ছুটি নিয়ে চট্টগ্রাম ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীতে ২০০৩ সালে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। আমি বিভিন্ন সময় দেখতাম আমার পার্শ্ববর্তী অনেক ইমাম ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইমামতির পাশাপাশি আর্থসামাজিক উন্নয়নে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের সাফল্য দেখে আমার কাছেও ভালো লাগতো। পড়ালেখা অবস্থায় ভাবতাম এমন একটি কাজ করবো যাতে আমিও উপকৃত হই এবং আমার সমাজের লোকেরাও যেনো উপকৃত হয়। আর সেই পরামর্শটা পেয়েছি ইমাম প্রশিক্ষণে।
কৃষিকণ্ঠ : ইমাম প্রশিক্ষণ নেয়ার পর এ পর্যন্ত আপনি কী কী কাজ করেছেন?
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম : মসজিদে প্রতি জুমায় বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করি। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করায় মুসলি্লর সংখ্যা বেড়েছে। আমার মুসলি্লদেরকে পশু পালন, মৎস্য চাষ, বনায়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে সম্পৃক্ত করতে উদ্বুদ্ধ করি। বিশেষ করে বাল্যবিবাহ ও মাদকের কুফল সম্পর্কে সমাজের মানুষকে সচেতন করতে চেষ্টা করেছি। আমি যেহেতু নিজ ইউনিয়নে ইমামতি করি, সে সুবাদে আমার বাড়িতে দেশি মুরগির একটি খামার করি। এ খামারটি কয়েক বছর পরিচালনা করে তার আয় দিয়ে পরে ৪টি গরু কিনে একটি খামার করি। এভাবে কয়েক বছর করার পর ২০০৮ সালে রূপসা ইউনিয়নের কাওনিয়া হানাফিয়া ফাযিল মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক পদে চাকুরি হয়। আমার নিজ বাড়িতে আল-আমিন পাঠাগার নামে একটি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করি।
কৃষিকণ্ঠ : বর্তমানে কী কী কর্মকা-ের সাথে জড়িত আছেন ?
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম : বর্তমানে আমি ৭০ শতাংশ জমিতে কৃষি কাজ করছি। ১০ শতাংশের উপর একটি পুকুরে মাছ চাষ করছি এবং ৬ শতাংশের মধ্যে বনায়ন করেছি। বর্তমানে রামগঞ্জের কেন্দ্রীয় সোনাপুর চৌরাস্তা জামে মসজিদে খতিবের দায়িত্ব ও কাওনিয়া হানাফিয়া ফাযিল মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করছি।
কৃষিকণ্ঠ : ইমামতির দায়িত্বের পাশাপাশি এতো কাজ করেন এতে আপনার অনুভূতি কি ?
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম : পরিশ্রম একজন মানুষকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সফলতা এনে দেয়। তেমনি আমার পরিশ্রম আমাকে সফলতা এনে দিয়েছে। আমি গ্রামের মসজিদে স্বল্প বেতনের একজন ইমাম ছিলাম। সেখান থেকে আজ আমি এতটুকু হয়েছি, যা কখনো কল্পনাও করিনি। কৃষি কাজে আমার মাসিক আয় হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এতে আমার সাংসারিক খরচ মিটিংয়ে গরিব দুঃখিদের সাহায্যে হাত বাড়াতে পারলে নিজের কাছে খুব ভালো লাগে। বিশেষ করে আমার অনেক আত্মীয়স্বজন আছে যারা আমার দেখাদেখি তারাও কৃষি কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে।
কৃষিকণ্ঠ : প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ইমামদের জাতীয় পর্যায়ে কোন্ ক্যাটাগরিতে মূল্যায়ন করা হয় ?
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম : প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে বলা হয়েছে আমাদের প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞানের মূল্যায়ন হবে ৬ মাস পর। নিজ মসজিদ এলাকায় প্রশিক্ষণলব্দ জ্ঞান দিয়ে কী কী কাজ করেছি, তার উপর প্রতি মাসে একটি প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। আর সেই প্রতিবেদনের মূল্যায়ন হয় রিফ্রেসার্স কোর্সের মাধ্যমে। সেখানে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ হয়। এসবের উপর ভিত্তি করে প্রথম জেলা পর্যায়ে বাছাইয়ে ইয়েস কার্ড অর্জন করে, তারপর বিভাগীয় পর্যায়ে ইয়েস কার্ড অর্জন করে, পরে জাতীয় পর্যায়ে এবং বিভিন্ন বিষয়ের উপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর যোগ্যতার ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠ ইমাম নির্বাচিত করা হয়া। জাতীয়ভাবে ৩ জনকে নির্বাচিত করে নগদ ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার, সনদ, পবিত্র হজ্ব পালন ও মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় সফরের সুযোগ করে দেয় ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আমি যেনো জাতীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করতে পারি সে জন্যে সকলের দোয়া কামনা করছি।
কৃষিকণ্ঠ : আপনার মৎস্য চাষ ও বনায়ন সম্পর্কে কিছু বলুন।
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম : আমার পুকুরে মাছ চাষ করছি রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, কার্প, সরপুঁটি ও শিং। আমার বাগানে দেশি-বিদেশি ফলফলাদি গাছের চারা রোপণ করেছি এবং বনজ বৃক্ষও রোপণ করেছি। আমি এবং আমার স্ত্রী কাজেই বিশ্বাসী। আমার বিশ্বাস আমি আমার এসব কাজের মাধ্যমে বিপ্লব ঘটাতে পারবো ইনশাআল্লাহ।
কৃষিকণ্ঠ : চাঁদপুর কণ্ঠের মাসিক আয়োজন কৃষিকণ্ঠের সাথে আপনি আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে মতামত দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ।
মুহাম্মদ খোরশেদ আলম : আমার এ ক্ষুদ্র অর্জন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের মাসিক আয়োজন কৃষিকণ্ঠে প্রকাশ করবেন জেনে আমি খুব আনন্দিত ও আপনাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।
ফজর | ৪:৫৮ |
যোহর | ১১:৪৫ |
আসর | ৩:৩৬ |
মাগরিব | ৫:১৫ |
এশা | ৬:৩১ |
হেরার আলো
|
বাণী চিরন্তন
|
আল-হাদিস
|
২৫-সূরা ফুরকান
সুকর্ম কখনো হারিয়ে যায় না।
বিদ্যার মতো চক্ষু আর নেই, সত্যের চেয়ে বড় তপস্যা আর নেই, আসক্তির চেয়ে বড় দুঃখ আর নেই, ত্যাগের চেয়ে সুখ আর কিছুতেই নেই। |
করোনা পরিস্থিতি | ||
বাংলাদেশ | বিশ্ব | |
আক্রান্ত | ৭,৫১,৬৫৯ | ১৬,৮০,১৩,৪১৫ |
সুস্থ | ৭,৩২,৮১০ | ১৪,৯৩,৫৬,৭৪৮ |
মৃত্যু | ১২,৪৪১ | ৩৪,৮৮,২৩৭ |
দেশ | ২০০ ২১৩ | |
সূত্র: আইইডিসিআর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। |
হ্যাঁ | না | মতামত নেই |